ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
শৈল শহর দার্জিলিং সেবার আমার প্রথম যাওয়া। তার পরে অবশ্য আরও বার কয়েক গিয়েছিলাম। তবে সেই যাওয়াটা কোনদিনও ভুলতে পারবো না। আমি অনেক গুলি সমুদ্র সৈকত ঘুরেছি। ছোট খাঁটো পাহাড়ের জনপদও দেখেছি। তবে শৈল্য শহর গুলিতে তখনও আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কারণ বরাবরই পাহাড়ের পথে আমার একটা ভয় করতো। কিন্তু এক দাদার অনুরোধে সেদিন দার্জিলিং গিয়েছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল। তারই কিছুটা বলতে চাইছি।
যাওয়াটা হয়েছিল দু’হাজার এক সালের মে মাসের শেষ দিকে। গিয়েছিলাম আমি, আমার স্ত্রী মিলি, আর আমাদের ছোট দুটি কন্যা।
হঠাৎ করেই প্রোগ্রামটি হয়ে গিয়েছিল। আমার এক বন্ধুর দাদা, জগাদা-র অনুরোধে। সেবার সে দার্জিলিং যাবার গাড়ি এ্যারেঞ্জ করেছিল। গাড়ি ছাড়ার ঠিক দুদিন আগে এক রবিবারের সকালে আমার বাড়িতে এসে আমাকে ধরেছিল। সপরিবারে ওদের গাড়িতে আমাকে দার্জিলিং যাবার জন্য। আমি বলেছিলাম, এতো অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি হওয়া আমার পক্ষে খুব অসুবিধা। তার উপর বাস জার্নিতে অতোটা দূরে যেতেও ভালো লাগে না। কিন্তু জগাদা একেবারেই নাছোড় বান্দা। সে বলল, বাসটি দেখলেই তোমার পছন্দ হয়ে যাবে। খুব সুন্দর একেবারে আধুনিক কোচ। ঘুমিয়ে ঘুমিয়েও যেতে পারবে। কোনও অসুবিধা হবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এসব শুনে মিলি বলল, অতো করে যখন বলছেন। তার উপর আশেপাশের পরিচিতরাও যখন যাচ্ছে। চলোই না, একবার বাস যোগেই ঘুরে এসে দেখা যাক কেমন লাগে?
আমি বললাম, জানোই তো, পাহাড়ি পথে আমার একটু ভয় করে। সেই কারণেই যেতে চাইছি না। তার উপর এতো তাড়াতাড়ি গোছগাছেরও তো একটা ব্যাপার আছে?
মিলি বলল, তা বলে কি কখনও শৈলশহরগুলিকে তুমি দেখবে না, নাকি? সেটা তো আর হতে পারে না? আর গোছগাছের ব্যাপারটা তুমি আমার উপর ছেড়ে দাও। ওসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার পাহাড়ে যাবার অভিজ্ঞতা আছে। আমি জানি কী কী সঙ্গে নিতে হবে। আর কী কী নেওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন, ওখানে শীত থাকলেও আমরা শীতের পোশাক বিশেষ নেব না। হালকা এক-আধটা নিলেই হবে। যখন শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি উপরে উঠতে শুরু করবে। তখন থেকেই একটু শীত করতে থাকবে। শুধু মাত্র সেই সময়ের জন্যই নেব। তারপর দার্জিলিং পৌঁছে ওখান থেকেই শীতের পোশাকগুলো কিনে নেব। কলকাতার থেকে অনেক সস্তাও পড়বে। সেই সঙ্গে ওখানের মার্কেট করাও হয়ে যাবে। তুমি বরং কালকে তোমার অফিসে গিয়ে ছুটি গুলো স্যাংশনটা করিয়ে নাও।
আমি বললাম, ছুটি নেওয়ার কোনও অসুবিধা হবে না। আমার অনেক ছুটিই মজুত রয়েছে।
এক রকম মিলির কথাতেই সেদিন রাজিটা হয়েছিলাম। অবশেষে এসেও গেল সেই দিন। অফিস থেকে আমি একটু আগেই বাড়ি ফিরে ছিলাম। মিলি আগে থেকেই ঠিকঠাক গোছগাছ করে রেখেছিল। জামাকাপড় ছাড়াও ছোটদের জন্য আপদকালীন ওষুধ থেকে শুরু করে, টুকটাক শুকনো খাবার সবকিছু।
সন্ধ্যার আগেই গাড়িটা ছেড়েছিল। ভিডিও কোচ। সুন্দর সুন্দর মিউজিক বাজছিল। বাস চলা কালিন-ই ওরা সবাইকে টিফিনগুলো দিয়েছিল। বাটার টোষ্ট আর মিষ্টি।
রাত দশটা নাগাদ গাড়িটা এক পাঞ্জাবি ধাবার এসে দাঁড়ালো। ওখানে জল বাথরুম ইত্যাদির সুব্যবস্থা আছে। আমরা মুখ-হাত ধুয়ে খোলা লনের টেবিলে বসে গরম গরম চিকেন আর রুটি খেয়ে নিলাম। কেউ কেউ ভাতের থালিও নিল। মিলি অবশ্য তড়কা, রুটিতেই তার ডিনারটা সেরে নিল। কারণ ওকে এক রকম ভেজিটেরিয়ান-ই বলা চলে। ডিম ছাড়া কোনও আমিষ খাবারই মিলি কখনও খায়নি।
এরপর জাতীয় সড়ক ধরে গাড়ি ছুটে চলল। এখন আর গাড়িতে না বাজছে মিউজিক। আর না জ্বলছে আলো। সবাই একটু ঘুমিয়ে নেবার চেষ্টা করছে। আমিও তাই করলাম। ঘন্টা দুই পরেই আমার তন্দ্রাটা ভেঙে গেলে আর ঘুম এলো না। জানালা দিয়ে প্রকৃতি দেখতে থাকলাম।
ভোর পাঁচটা নাগাদ গাড়িটি হোল্ড করল। সেখানে মুখ হাত ধুয়ে একটু চা ইত্যাদি খেয়ে নিলাম। তারপর আবার গাড়ি ছুটলো। এবারে গিয়ে থামলো ডালখোলা। ওখানেই ব্রেকফাস্টের অর্ডার হলো।
আমরা ওই ফাঁকে ডালখোলা’র মার্কেটটা একটু ঘুরে নিলাম। ফিরে এসে রঙিন ছাতার তলায় বসে গরম গরম কচুরি, ঘুগনি,আর মিষ্টি খেলাম। দারুন লাগলো। তারপর কফিতে চুমুক দিয়ে গাড়িতে উঠা।
গাড়িটা ছাড়ার কিছুটা পরেই চোখে এলো। ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘের পাশেই পাহাড়ের উপস্থিতি। আর সেটা দেখে সকলেই প্রায় হৈহৈ করে উঠলো। এবারে যেন আমাদের বুঝিয়ে দিল। তোমরা আর পাহাড় থেকে বেশি দূরে নেই।
বেলা দশটা নাগাদ পৌঁছে গিয়েছিলাম শিলিগুড়ি। ওখানেই একটি হোটেলে লাঞ্চের বরাদ দেওয়া হলো। ওরা বেলা বারোটায় লাঞ্চ করাবে জানিয়ে দিয়েছিল। তাই হাতে সময় আছে দেখে আমরা ওখান থেকে স্নানটান সেরে। রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। শিলিগুড়ির হংকং মার্কেট দেখতে। ওখানে দেখলাম অল্প দামে চায়না মেড প্রচুর জিনিস পাওয়া যাচ্ছে।
যাইহোক মার্কেট সহ আশপাশটা দেখে কিছু কিনে হোটেলে ফিরেছিলাম ঠিক বারোটাতেই। খুব সুন্দর খাওয়া। বড় কাতলা মাছের ঝাল, ডাল, আমের চাটনি, টকদই। পরিতৃপ্তি করে খাওয়ার পরে শিলিগুড়িতে বাস রেখে ছোটো ছোটো জীপসী গাড়িতে করে পাহাড়ে উঠতে হলো। তা’নাহলে ট্রয় ট্রেনেও ওঠা যেতো। সে ক্ষেত্রে জীপসী যেখানে সারে তিন থেকে চার ঘন্টার মধ্যে দার্জিলিং পৌঁছাবে। সেখানে ট্রয় ট্রেন নাকি ছ’ঘন্টারও বেশি সময় নেবে।
আমাদের বাস চালকটি বলল, জীপসী’তে গেলেই সুবিধা হবে। চালকটি আমাদের সাথে এতোটাই ক্লোজ হয়ে গিয়েছিল যে, সে বলল—আমি আপনাদের সাথে পাহাড়ে উঠবো।
এরপর আমরা জীপসী ও সুমোতে ভাগ হয়ে হিলকাট রোড ধরে পাহাড়ে ওঠা শুরু করলাম। সে এক অসাধারণ অনুভূতি। ধীরে ধীরে শিলিগুড়ির শহরটাকে নিচে রেখে আমরা সবুজ ঘেরা উঁচু পথ বেয়ে উঠতে থাকলাম। আর সেই সঙ্গে সমতলের মারাত্মক উষ্ণতাটাকেও পুরোপুরি ছেড়ে এলাম।
দেখলাম আমাদের পাশে পাশে একটি ট্রয় ট্রেনও এগিয়ে চলেছে। কিছুটা পথ এভাবে যেতে যেতে এক সময় আমাদের গাড়ি গুলো ট্রেনটিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল। এরপর বেশ শীত শীত অনুভব হতে লাগলো।
মিলি ছোটো ব্যগে ভরে রাখা হালকা জ্যাকেটগুলো বের করে আমাদের দিয়ে বলল, এবারে কিন্তু এগুলো লাগবে।
আমি বললাম, লাগবে তো বুঝতেই পারছি। তবে আরও একটু পরে গায়ে দেব।
লাইন দিয়ে পর পর আমাদের গাড়ি গুলি ছুটে চলেছে। রাস্তার এক পাশে সবুজ পাহাড় আর অপর পাশে গভীর খাদ। নিচের দিকে তাকালে মাথা যেন ঝিমঝিম করছে। আমার ছোটো মেয়ে তার মায়ের কোলে মুখ গুঁজে বসে রয়েছে। বড়োটির অবশ্য ভয়ডর একটু কম। তাই সে জানালা দিয়ে নির্দ্বিধায় পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।
এই পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ের গাড়িগুলিকে ছোট ছোট পিঁপড়ের মতো লাগছে। যেন সবুজ ঘাসের উপর তারা হেঁটে বেড়াচ্ছে।
এরপর বেশি শীত করতে লাগলে। জ্যাকেটখানা গায়ে চাপিয়ে মাফলারটি গলায় জড়িয়ে নিলাম। তখনও বেলা ডুবতে অনেকটাই বাকি ছিল। গাছে গাছে রোদের খেলা চলছিল। আর আমাদের গাড়িও ছুটছিল।
এমতাবস্থায় এক জায়গায় গাড়িগুলিকে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হলো। আমি সামনের গাড়িটিতেই ছিলাম। তাই খুব ভালো ভাবে প্রত্যক্ষ করতে পারলাম। আর দারুণ একটা অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করলাম। দেখলাম অনেকটা জায়গা জুড়ে হঠাৎ একেবারে ঘণ জমাট বাঁধা কুয়াশার উপস্থিতি। তাই চারিপাশে কোথাও আর কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। গাড়ির চালকটি আমাদের আশ্বস্ত করে বলল, ভয় পাবেন না। সামনে যেটা দেখছেন ওটা মেঘ। ওখানে খুব বৃষ্টি হচ্ছে। যতক্ষণ না মেঘটা সরে যাচ্ছে। ততক্ষণ যাওয়া যাবে না। জীবনে এই প্রথম হাতের কাছে মেঘ দেখলাম। সত্যি মনে রাখার মতো এক দৃশ্য।
কিছুক্ষণ পরে মেঘটা বাঁ দিকের খাদে নেমে গেলে সবটা পরিস্কার হয়ে গেল। তবে সদ্য বৃষ্টির জলে রাস্তাটি দেখলাম থৈথৈ করছে।
যাইহোক সন্ধ্যা নামার আগেই গন্তব্যে। অর্থ্যাৎ শৈল শহর দার্জিলিংয়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমরা দার্জিলিং ষ্টেশনের খুব কাছেই, ট্রয়ট্রেন লাইন ও হিলকাট রোডের গায়েতেই একটি ভালো হোটেল পেয়ে গেলাম। তার ডানদিকে একটু পা বাড়ালেই মার্কেট। হোটেলটির নাম “হোটেল হিল-রোজ” যথেষ্ট টিপটাপ। আমরা ছিলাম দ্বিতলে। খোলা ব্যালকনি থেকেই দেখা যায় সারি সারি সবুজ পাহাড়। আর সদা ব্যস্ত হিলকাট রোড ও কু-ঝিকঝিক ট্রয় ট্রেনের ধোঁয়া উড়িয়ে যাওয়া আসা।
পরের দিন সকাল থেকেই তৎপরতা। ব্রেকফাস্টটা খেয়েই সবাই বেরিয়ে পড়েছিলাম। ভিউ-পয়েন্টগুলি দেখার জন্য। ষ্ট্যান্ড থেকে ছোট ছোট জীপ, সুমো ইত্যাদি ভাড়া করতে হলো। ভাগাভাগি করে গাড়িতে উঠে শুরু হলো যাত্রা।
প্রথমেই যাওয়া হয়েছিল ডালি মনাষ্ট্রি। এটি পাহাড়ের অনেকটা উঁচুতে। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে এখানে একটি স্কুলও আছে।
তারপরে আমাদের গাড়ি গিয়ে পৌঁছালো বাতাসীয়ালু তে। ওটা ছিল হিলকাট রোডের একেবারে গায়ে। এখানে সুন্দর করে সাজানো শহিদ স্মৃতি স্তম্ভ আছে দেখলাম। আর এই স্তম্ভটিকে সিক্সটি ডিগ্রী পাক দিয়ে ট্রয় ট্রেনের রুট। সেই লাইনের উপরে শীত বস্ত্রের পসরা সাজিয়ে হকাররা বসে রয়েছে। ট্রেন এলেই এরা উঠে পরে। চলে গেলেই পূনরায় বসতে থাকে। মজার ব্যাপার হলো এই জায়গায় ট্রেনটি খুবই আস্তে চলে। তাই দেখলাম বাতাসীয়ালুতে ট্রেন ঢোকার মুখে কেউ কেউ ট্রেনের পা'দানীতে উঠেছে। আবার ট্রেনটি ঘুরে বেরিয়ে যাবার সময় টুক করে নেমে পড়ছে। জায়গাটি খুব উঁচুতে অবস্থিত বলে, এখান থেকে দূরবীনের সাহায্যে চিনের বর্ডারও দেখা যাচ্ছে।
ওখান থেকে বেরিয়ে এবারে চললাম রক গার্ডেন। রাস্তাটির দু’পাশে চোখ জুড়ানো দৃশ্য। তবে এখানের পথটি অত্যন্ত সংকির্ণ আর খাড়াই। আমি বসে ছিলাম চালকের বাঁ পাশে। আর যখন উল্টো দিকের গাড়িকে সাইড দিচ্ছিল, আমি নিচের দিকে তাকাতেই ড্রাইভারটি বলল, উধার মত দেখিয়ে সাব। আমি চমকে উঠলাম। আর নিচের দিকে তাকালাম না।
এখানের রাস্তাটি এতোটাই ঢালু, যে চালক ষ্টার্ট বন্ধ রেখে ষ্টিয়ারিংটাই ধরে রইলো। তাতেও যেন গাড়ির গতিটাকে সামলানো মুশকিল হচ্ছে। আমরা ক্রমাগত সামনে ঝুঁকে পড়ছিলাম। তবে সেখানে পৌঁছে টিকিট কেটে ভিতরে ঢোকা মাত্রই মনটা ভরে গেল। অপূর্ব একটি স্পট। চারিদিকে সাজানো গোছানো সুন্দর সুন্দর ফুলের গাছ। পাথরের উপর খলখল করে ছুটে চলা নদী। অপর পাশে ছোট একটি জলাশয়। সেখানে ঘুরছে রঙিন মাছের ঝাঁক। এক কথায় অনবদ্য।
ওখান থেকে ফেরার সময় হিলকাট রোডে ওঠার আগে। চালকের একটা কথা শুনে বুকটা আমার কেঁপে উঠল। সে বলল, যেখানে আপনাকে নিচে দেখতে বারণ করেছিলাম। ওখানেই তিনদিন আগে আমার এক বন্ধু চারজন প্যাসেঞ্জার নিয়ে নিচে পড়ে গেল। আমার বন্ধু সহ দুজন স্পট ডেড।
এরপর হোটেলে ফিরে খাওয়া সেরে ঘন্টা খানেকের রেষ্ট। তারপর আবার বেরিয়ে পড়া। এবারের গন্তব্য দার্জিলিং ষ্টেডিয়াম ও জুগার্ডেন। ষ্টেডিয়ামটি খানিকটা নিচে। আমরা রাস্তাটিতে দাঁড়িয়ে অবাক। এমন সময়ও পুরো মাঠটি ঘন কুয়াশাতে ঢাকা পড়েছে। বোঝার উপায় নেই এখানে কী আছে?
তারপর জু গার্ডেনের টিকিট কেটে ভিতরে গিয়ে দারুণ লাগল। কত না দেখা পশুপাখি দেখতে পেলাম। তার মধ্যে আছে রেড পান্ডা, শ্লথ, তুষার চিতা, আরও কত কিছু। তবে জায়গাটি এতটাই চড়াই উৎড়াই যে বেশিক্ষণ ঘোরা গেল না। পাশেই নরগে ফাউন্ডেশন। ওখানেও টিকিট করে ঢুকতে হয়।
সন্ধ্যা নেমে আসায় ওই দিনের মতো ঘোরাঘুরি শেষ করে হোটেলে ফিরে এসেছিলাম। পরের দিন টাইগার-হিল যাওয়ার কথা। তাই সবাইকে রাত থাকতে উঠতে হবে। গাড়ি বলা আছে। ওরা হোটেলের সামনে এসে হর্ণ দেবে। তার আধ ঘন্টার মধ্যে আমাদের তৈরি হতে হবে। তাই একটু তাড়াতাড়ি বিছানা নিয়েছিলাম। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে দেখি। জানালার কাঁচে বিদ্যুতের আলো পড়ছে। আর আকাশ ডাকছে। সেই সঙ্গে শীতটাও জাঁকিয়ে এসেছে। লেপের উপর আরও একটি কম্বল চাপিয়ে নিলাম।
এরপরে ঘুম ভাঙলো, গাড়ির ক্রমাগত হর্ণ শুনে। আমি উঠে চোখে মুখে জল দিয়ে। মিলি’কে ডাকলাম।
মিলি ঘুম জড়ানো চোখেই আমাকে বলল, খুব বৃষ্টি হচ্ছে তো?
আমি বললাম, হ্যাঁ, তাতে কী? গাড়ি এসে হর্ণ দিচ্ছে, ওঠো।
মিলি বলল, নিচে গিয়ে ওদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো, যাওয়া যাবে কিনা? আমার তো মনে হয় না, এতো বৃষ্টিতে টাইগার হিলে ওঠা যাবে?
এই বলে মিলি আরও ভালো করে লেপটাকে জড়িয়ে নিল। আমি, জগাদা সহ কয়েকজন ড্রাইভার দের সাথে দেখা করলাম। ওরা বলল টাইগার-হিল এগারো কিলোমিটার দূরে। তার উপর জায়গাটি খুব উপরে। ওখানে বৃষ্টি নাও হতে পারে। বেরিয়ে পড়ি চলুন।
ঠিক এমন সময় হোটেল ম্যানেজার এসে বলল, আমার মনে হয় বৃষ্টিটা সর্বত্রই হচ্ছে। আর মেঘ বৃষ্টি থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবেন না। আরও যেটা বড় কথা ওখানের রাস্তাটা অত্যন্ত খাড়াই। অতএব বৃষ্টি হলে পিচ্ছিল হয়ে যাবে। তাই এতো রিস্ক না নেওয়া টাই ভালো। প্রোগ্রাম করে রাখুন আগামী দিন যাবেন।
আমরা হোটেল ম্যানেজারের কথাকেই মান্যতা দিয়ে আবার লেপ মুড়ি দিলাম। আর অমনি কড়কড় করে আকাশটা আবার ডেকে উঠল।
শুনেছিলাম ওইদিন টাইগার হিলেও প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিল। একটু বেলার দিকে আকাশটা পরিস্কার হলে শীত পোশাক গায়ে চড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম টি-গার্ডেন দেখতে। শুনলাম এই টি-গার্ডেনটি নাকি দেশের প্রথম টি-গার্ডেন। তবে সত্যি গার্ডেন খানা এতোটাই দৃষ্টি নন্দন যে চোখ ফেরানো কঠিন। ওখানে নেপালী পোশাক ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আর উৎসুকি মানুষজন ওই পোশাক গায়ে চাপিয়ে পিঠে ঝুড়ি নিয়ে চা'পাতা তোলার ছবি তুলছে। আমরাও তুলে ছিলাম। এবং ওই বাগানের চা’ পাতা বিক্রিও হচ্ছে। আমরা তাজা সবুজ চা-পাতার প্যাকেট কয়েক খানা করে সংগ্রহও করে নিয়েছিলাম।
এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে। হোটেল ম্যানেজারের থেকে জেনে নিয়েছিলাম লাল-কুঠির ঠিকানাটা। পায়ে হেঁটে দশ মিনিটের পথ।
নরম রোদটা গায়ে মেখে আমি আর মিলি, কন্যাদের সঙ্গে নিয়ে। সেই পথে হাঁটা শুরু করলাম। পিচ ঢালা আঁকন বাঁকন পথটি ভারী সুন্দর। তার দুপাশেই ঘন পাইনের বিস্তৃত রাজত্ব। শির শিরে ঠান্ডা বাতাসের সাথে মিশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ গুলি পায়ের কাছে ভেসে বেড়াচ্ছে। এমন অপরূপ দৃশ্য দেখে চোখটাকে আমরা স্বার্থক করলাম। তবে লাল-কুঠিরের শোভাটাও কিছু কম নয়। লাল-কুঠিটির সামনে দাঁড়িয়ে সেই শৈশবে দেখা রঞ্জিত মল্লিক, তনুজা, অভিনিত সিনেমাটির কথা মনে পড়ে গেল।
তারপর চড়াই উৎড়াই পাহাড়ি পথে ঘুরে জাপানের বুদ্ধ মন্দির ও পাহাড়ের শোভা উপভোগ করে সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে এসেছিলাম। পরের দিন টাইগার-হিলের প্রোগ্রাম।
এদিন আর বৃষ্টি নেই। গাড়িগুলি ঠিক সময়ে এসে গতকালের মতো হর্ণ দিতে লাগলো। আমাদের থেকেও ওরা সময় বোধে অনেক সচেতন। আমরা উঠে তৈরি হয়ে গাড়িতে উঠলাম। চারিদিকে তখন ঘন অন্ধকার। সেই সঙ্গে প্রচন্ড ঠান্ডা। প্রত্যেকের গায়ে ডাবল শীত বস্ত্র। গাড়িগুলি ছুটে চলল টাইগার হিলের উদ্দেশ্যে।
এক সময় গাড়ি হিলকাট রোডের ঘুম ষ্টেশনকে পাশে রেখে ডান দিকে বাঁক নিল। রাস্তাটি অনেক সরু আর খাড়াই। সেখানে পৌঁছে তাড়াতাড়ি টিকিট কেটে টাইগার-হিল পয়েন্টে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখলাম আমরা যাবার আগে অনেক মানুষ সেখানে পৌঁছে গেছে। ঠান্ডায় হাত পা বরফ হয়ে যাবার উপক্রম। কফি ফেরি করছে দেখে কফি নিতে গিয়ে দেখি। বড় কন্যাটিকে দেখতে পাচ্ছি না।
মিলি উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, এখানেই তো ছিল। গেল কোথায়?
আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম। কফি খাওয়া মাথায় উঠল। মিলি আর ছোট মেয়েকে ওখানেই দাঁড়াতে বলে, আমি খোঁজা শুরু করলাম। আমাদের গাড়ির লোকগুলোও কোনো খবর দিতে পারলো না।
কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ কফিওয়ালা ছেলেটি হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, টাওয়ারের কাছে মনে হলো আপনাদের মেয়েটি দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম—তুমি কি ভাবে চিনলে তাকে?
ছেলেটি বলল, মাথার রুমাল দেখে। বৌদি, আর ছোট বোনটির যেমন রুমাল। ঠিক ওই একই রকম একটি রুমাল মাথায় আট দশ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
মিলি বলল, হ্যাঁ, ও ঠিক বলেছে। এই রুমাল ওর মাথাতেও আছে।
আমি বললাম, কোথায় দেখেছ? তাড়াতাড়ি সেখানে চলো ভাই।
সে বলল, আসুন।
আমরা তার সাথে গিয়ে দেখলাম, সত্যি আমাদের মেয়েটি টাওয়ারের পাশে একা দাঁড়িয়ে আছে। ওকে দেখতে পেয়ে আমাদের ধরে প্রাণ এলো।
জিজ্ঞাসা করতে বলল, আমি তো পাহাড়ের ছবি তুলছিলাম। তারপর ঠেলাঠেলিতে হঠাৎ পিছন দিকে সরে এসে আর তোমাদের দেখতে পাইনি।
কফিওয়ালা ছেলেটি বলল, সাব আমি আসছি?
আমি তার পিঠ চাপড়ে, হাতে পঞ্চাশটা টাকা দিয়ে বললাম, তুমি এইটা রেখে দাও ভাই।
ছেলেটি আমাদের অবাক করে দিয়ে বলল, না বাবু ওটা আমি নিতে পারবো’না। বরং আপনি কফি কিনুন ওতেই আমি খুশি হবো।
আমরা কফিগুলো নিয়ে চুমুক দিতেই যেন ভুলে গেলাম। সে কফি, কফি, বলতে বলতে এক সময় ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে গেল। ভাবলাম এরা বুঝি এরকমই হয়।
ওদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর তখন রঙের আভা পড়তে শুরু করেছে। উৎসুক মানুষজন ক্যামেরা হাতে খচাখচ ছবি তুলছে। আমার মেয়েও ক্যামেরা বন্দি করে নিল। ধীরে ধীরে কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়ায় ছড়িয়ে পড়লো অপরূপ এক আলোর দ্যুতি। এই দৃশ্যটি দেখার জন্যই দেশ বিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে টাইগার-হিলে। তখনও পাহাড়ের নিচের গ্রামগুলি অন্ধকারে ঘুমিয়ে আছে।
সূর্যোদয় দেখা হয়ে গেলে আমরা ওখান থেকে খানিকটা নেমে একটি ছোট দোকানে বসে কিছু জলযোগ সেরে নিলাম। এরপর আমাদের টাইগার হিল থেকে নামার পালা। ততক্ষণে দেখলাম দিনের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আশেপাশের গ্রামগুলো জেগে উঠেছে। পশম পোশাক গায়ে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ছড়ি হাতে ভেড়ার পাল নিয়ে চড়াতে বেরিয়েছে। ঢালু পথে বেয়ে এঁকে বেঁকে আমাদের গাড়ি খানাও নেমে চলেছে। কোথাও লেফট টার্ন, কোথাও রাইট টার্ন, কোথাও আবার ইউ টার্ন। এভাবে গাড়িটি ছুটতে ছুটতে যেটা ঘটলো সেটার জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। ভয় একটা ছিল। এবিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তা বলে সত্যি এরকম ঘটবে কল্পনাও করতে পারিনি। তখন মনে হচ্ছিল কেন পরিবার নিয়ে এখানে আসতে গিয়েছিলাম? অতো ঠান্ডাতেও আমি ঘেমে উঠলাম যখন ড্রাইভার আমার কানে বলে দিল—ভাই সাব হামারা গাড়িকা ষ্টিয়ারিং কুছ কাম নেই কর রাহা হ্যায়। মতলব ষ্টিয়ারিং কাট চুকা।
আমি চোখগুলো বড়ো বড়ো করে বলে উঠলাম বলছো কী?
—ড্রাইভার বলল, চুপ সাব, সব আদমি ডর জায়গা।
—আমি বললাম ব্রেক করো।
—নেই সাব, এতো ঢালু পথে ব্রেক মারলে গাড়ি পাল্টি হয়ে যাবে।
আমি পিছন দিকে তাকিয়ে দেখলাম। মিলি’রা কেউ কিছু এখনও বুঝতে পারেনি। বোঝার কথাও নয়। পাশে চোখ ফেলে দেখি গভীর খাদ। এই মুহূর্তের রাস্তাটি ভীষণ খাড়াই তবে অনেকটা সোজা। কোনরকম টার্ন এলেই আমাদের রক্ষে নেই। টার্নিং মুখে সোজা খাদে চলে যাবে। এবারে চোখে পড়ল পঞ্চাশ মিটারের মধ্যে আসতে চলেছে একটা রাইট টার্ন। আমি ধরেই নিলাম এবারে সব শেষ। চোখটা বুজিয়ে নিয়েছিলাম। হঠাৎ এল একটা জোরে ঝাঁকুনি।
গাড়ির গতিটা একেবারে থেমে গেল। ধীরে ধীরে চোখ খুলে দেখলাম। সামনের খাদের কিনারায় একটি ছোটো ক্লাবঘর ছিল। তার-ই ছোট একটি পিলারে আমাদের গাড়িটি ধাক্কা দিয়ে সামনের একটি চাকা আটকে আছে। আর অন্যটি ঝুলছে। বুঝলাম ঈশ্বরই আজ আমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছেন।
ড্রাইভার বলল, আপনারা টেনশন করবেন না। আস্তে আস্তে সবাই নেমে আসুন।
সবাই নেমে এলে, আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। ড্রাইভারটি অন্য একটি গাড়ি এ্যারেঞ্জ করে আমাদের হোটেল পাঠিয়ে দিল।
হোটেলে ফিরে পরিস্থিতিটার ঘোর কাটিয়ে সবাই একটি ঝর্ণা দেখতে গিয়েছিলাম। সাজানো গোছানো চমৎকার একটি পার্কের মতো জায়গা। ঝর্ণাটি কোথা থেকে নেমে আসছে দেখা যাচ্ছে না। কয়েকটি ধাপ সিঁড়ি বেয়ে উঠেও আবার নেমে এসেছিলাম।
ওইদিনই বিকেলে গিয়েছিলাম ম্যালে। কাল সকালে যাওয়া হবে মিরিক। ম্যালের পাশেই আছে মহাকাল শিবের বিশাল মন্দির। ওখানের বাবাকে দর্শন করে আমি স্ত্রী, কন্যাদের নিয়ে ম্যালের বাজারটিতে এলাম। বাড়ির সকলের জন্য কিছু কেনাকাটা করতে। ইতিমধ্যেই অনেকটা শপিং হয়ে গিয়েছিল। দার্জিলিং বাজার থেকে। এবারে এলাম ম্যালের বাজারে।
তখন অন্ধকার নেমে এসেছে। আমরা ছিলাম একটি গলির ভিতরে জামা কাপড়ের দোকানে। ছোটদের সোয়েটার ইত্যাদি কেনার জন্য। গলি থেকে বের হতেই দেখলাম। ম্যালের দোকান গুলো সব ঝপাঝপ ঝাঁপ ফেলছে। আর একটি দোকান দাউদাউ করে জ্বলছে। দ্রাম দ্রাম করে টিয়ার সেলও ফাটছে। চারিদিকে সাদা ধোঁয়া। আমরা ছিলাম অনেকটা দূরে। তবুও চোখ জ্বলছিল। আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলাম না। কী হয়েছে? বা এখন আমাদের কী করা উচিত কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
মিলি বলল, বড়ো কিছু একটা অবশ্যই ঘটেছে। ছুটোছুটি না করে আমাদের এখানেই দাঁড়িয়ে থাকা উচিত। দেখা যাক কী হয়। এখন টিয়ার চলছে। এরপরে গুলিও চলতে পারে। চারিদিকে গোর্খা পুলিশ পজিশন নিয়েছে।
আমি শক্ত করে আমাদের মেয়ে দুটির হাত ধরে রইলাম। এভাবে প্রায় পনের কুড়ি মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরে দেখি হন্তদন্ত হয়ে কিছু গোর্খা পুলিশ আমাদের দিকে এগিয়ে এলো। আর এসে আমাদের হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলো, আপনারা এখানে দাঁড়িয়ে কেন?
আমি বললাম, আমরা পর্যটক। কী হয়েছে? কিছু জানিনা। হোটেলে ফিরতে চাইছি। কিন্তু পারছি না।
বলল, সর্বনাশ হো গিয়া। “হামারা রাজা-রাণি কো মার দিয়া”।
আমরা চমকে উঠলাম, উনি বললেন তুরন্ত হামারা গাড্ডি মে বইঠিয়ে।
—আমি বললাম, আবার গাড়িতে কেন? আপনারা ওখানে বলে দিলে আমরা পায়ে হেঁটেই চলে যেতে পারতাম।
—উনি বললেন, সিচুয়েশন বহুত নাজুক হ্যায়। কিঁউকী শুনা হ্যায় ইন্ডিয়ান আদমি নে উসকো মারা।
এই কথাটি শুনেই মিলি বলল, আর দেরি করা ঠিক হবে না। চলো পুলিশের গাড়িতে গেলেই সেফ হবে।
গাড়িতে করে কিছুটা যেতেই চোখে পড়লো। উত্তেজিত কিছু মানুষ মশাল হাতে নিচে থেকে রাস্তার উপরে উঠে আসছে। আমাদের গাড়িটা স্পিড বাড়িয়ে সেই জায়গাটি অতিক্রম করল।
আমাদের হোটেলে নামিয়ে দিয়ে উনি ম্যানেজারকে বলে দিলেন। রাতে কেউ যেন বাইরে না আসে।
হোটেলে পৌঁছে ভাবলাম আপাতত বাঁচলাম। তবে যা ঘটেছে তাতে সমতলে না পৌঁছানো পর্যন্ত বাঁচলাম বোধহয় বলতে পারছি না।
হোটেল ম্যানেজার আমাদের বললেন—গন্ডগোল যদি বাড়ে তাহলে কার্ফু জারিও হতে পারে। তাতে আপনারা খুবই অসুবিধায় পড়বেন। অতএব আমি গাড়ি বলে রাখছি, আপনারা কাল সকালেই শিলিগুড়ি রওনা দিন। আর খবরদার ভুলেও এখন মিরিকের দিকে যাবেন না। ওটা একেবারে নেপালের বর্ডার। আর নেপালের রাজা-রাণীকেই মেরে দিয়েছে।
পরের দিন সকালে এক কাপ করে কফি খেয়েই বেরিয়ে এলাম। শিলিগুড়িতে নেমে এসে তবেই যেন আমরা সেদিন হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছিলাম।