ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
একবার সেই লক্ষীপুরে, উৎসব রোল গেরাম জুড়ে,
শীতলাপুজোয় মাতল সবে, আমশাঁখা ওই ঘটির পরে,
কিন্তু সবাই চিন্তিত যে, ঢাঁকির খবর নাই,
ঢাকের বাদ্যি ছাড়া পুজো কেমনে হবে ভাই!
কে জানে ভাই কেমনি রাগে মা হয়েছে লাল,
জ্বরের ঠেলায় আসল ঢাকির শিয়রে বসে কাল।
তার থেকেই খবর এলো, বিষ্ণুপুরের কোন এক গ্রামে,
রয়েছে এক ঢাক বাজিয়ে, আসবে নাকি অল্প দামে।
লোক পাঠিয়ে সেই গ্রামেতে, আনা হল সেই যে ঢাকি,
কাঠি পড়লেই সত্যি করে নেচে ওঠে বনের পাখি।
আনন্দেতেই মিটল পুজো, কেটে গেল দিনগুলো
দশ বিশটা পাঁঠার রক্তে মাটি ভিজে গেল।
সন্তানেরি রক্ত পায়ে চোখে মায়ের জল,
ভাসানপথে চলেন মাগো, মিশতে নদীর জল
শেষের দিনে সবাই খুশী, দারুন পুজো হোল।
ভাসানবিষাদ নিয়ে সবাই ঢাকিরে বিদায় দিল।
কয়েকটা দিন কাটলে পরে, গ্রামবাসী এক লক্ষীপুরের,
কাজের জন্য বেরিয়ে হঠাত দেখতে পেল সেই ঢাকিরে,
দেখেই তাহার মাথার পরে আকাশ থেকে বাজ পড়ে,
মাথায় টুপি দিয়ে ঢাকি, আজান পড়ে শুক্রবারে।
হায় গো একি অধর্ম হোল, হিঁদুর ঘরে পুজো হোল
মুসলিম তার ঠাকুর ঘরে চারদিন ঢাক বাজিয়ে গেল!
গাঁয়ের মোড়ল ব্যস্ত হোল, গোটা গ্রামের মিটিং হোল,
কেমনে যে এই পাপ থেকে আজ হবে পরিত্রাণ!
ডাকরে বামুন, ডাকরে সাধু, দিক তারা নিদান।
গাঁয়েরই এক বিধবা বুড়ি ডাইনি সবাই ডাকে,
দুর থেকে সে দেখছিল সব, চুপটি করেই থাকে,
হঠাৎ যেন তার ভেতরে দেবতার ভর হোল,
ভয়ে সবাই এক কোনেতে স্তব্ধ হয়ে গেল।
সেদিন তোরা বলেছিলি, রক্ত রক্ত রক্ত চাই,
সে পাপ ধুবি কোন গঙ্গায়, নরকেও হবেনা ঠাঁই।
যে প্রাণ কেড়ে পুজোর নামে, শুধুই অহংকার,
মায়ের থেকে ছা’কে কেড়ে নিয়েছে বার বার,
সেথায় যদি রহিম ঢাকি মায়ের চরণ স্মরণ করে
বাজায় বাদ্য একমনেতে শুধু পেটের ভাতের তরে,
কি হবে তোর ধর্ম নিয়ে, আগাগোড়া যার পাপের ভীড়ে
রক্ত নিয়ে হোলি খেলে মায়ের কোলটা শূন্য করে!
মাঝরাতে সেই জটলা শেষে সবাই চলে গেল
তবে পরের বার ওই পুজো থেকে বলি বিদায় নিল।