ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
এক সারি গাছ কালো পাখি পাতার ঘরে বাস
মাটির উপর ঘর বেঁধেছি উপরে আকাশ,
রক্ত বেচে জল কিনে খাই দুধের স্বাদে ঘোল
রাতের বেলা স্বপ্নঘোরে বোল-রাধা-বোল!
খিদের গরীব, গরীব খিদে গুনতি হবে ভোটে
আমরা যখন ঘুমিয়ে থাকি ওরা মাখন লোটে,
লুকনো সব গুচ্ছ টাকা কোটির দানে জিত
একশ টাকা দিন গেলে পাই, আমরা দেশের ভিত
ভাবলে যদি আসছে সুদিন নাচবে এবার কষে
দেখবে তোমার অ্যানিমিয়া রক্ত চোষার দোষে!
মরছো যখন মারতে হবে বাঁচতে যদি চাও
কালো পাখি ঠুকরে খাবে ছাল-চামড়া তাও।
ঘরের মধ্যে ঘর নেই আমার নেই
শীতলপাটি বিছানোর নিকানো
চিলতেখানেক পৃথিবী
ঘরের বাইরে কোন ঘর নেই আমার
নেই গোপন পুকুর বা ডুবজল ঠিকানা
যতদিন অন্ধকার তার ঠোঁটের রঙ
এঁকে দেবে আমার পিপাসায়
যতদিন সৌরশ্রমিকেরা ডেকে দিয়ে যাবে সবুজ উষ্ণতায়
যতদিন লোনাজল লবণকে বঞ্চনা করে চোখ
ধুয়ে দিয়ে যাবে সত্যসাহসে ততদিন,
ততদিন আমি এই চুম্বনচিহ্ন বয়ে নিয়ে হেঁটে যাবো
শেষ নিঃশ্বাসের দিকে ...
ইন্টেসটাইন ছিঁড়ে খেয়ে বেঁচে থাকা মৃত্যুকে
আদর করে রাতের পর রাত ঘুম পাড়িয়েছি
পড়শি বিছানায়
আর তারপর ঘুমোবার নাম করে লেপ্টে শুয়েছি
নরম যন্ত্রনার পাশবালিশে
মাথার নিচে কখন রেখেছি ঐতিহ্য
গায়ের উপর টেনে নিয়েছি ক্ষুধার্ত চাদর
এভাবেই কোন এক সময় নিভে যায়
জীবদেহজাত দাবানল
অ্যামাজনের পোড়া ধোঁয়া ক্যান বন্দী হয়ে
যোগ দেয় মোমবাতি মিছিলে
ইন্টেসটাইন ভরে ওঠে প্রশংসার থুতুতে
সমস্ত যন্ত্রণা হঠাৎ পোষাক বদলে দাঁড়ায় ভোরের প্লাটফর্মে
সমস্ত সৌরসন্তানের হাতে তুলে দেয়
গত রাতের প্রস্ফুটিত ছাই ...
তারপর আবার হাঁটতে থাকি অসুস্থ সন্ধ্যার দিকে।
সময়ের কোদাল দিয়ে কাটতে কাটতে জীবন
পৌঁছাই যখন, রাত তখন যৌবনবতী
আজন্ম তৃষ্ণা চেয়ে থাকে
ঘোর লাগা চোখে দেখি, বিশ্বময় প্রসব যন্ত্রনা,
অন্ধকার থেকেই তো এসেছিলো শুরুর সেদিন
এখনও তাই কেঁদে ওঠে জারজ আলো
কৃষ্ণকোটরে দ্রব হয়, যাবতীয় উচ্চাকাঙ্খা এবং ‘আমি’
এরপর রাত নিভে আসে প্রৌঢ়া অন্ধকার
আমাকে তাড়া করে নষ্ট-যৌবন
দৌড়াতে চাই, পারিনা বেঁধে ফেলতে চায়
অন্ধকারের পেলব পেশী
পালাতে চাই, দেখি সবখানে সবাই চেনা
অতঃপর পিছন ফিরে দেখি,
দেখি আমার পিছনে আমি এবং
অন্তকঙ্কাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আসা নিরুদ্দেশ আদর ...
হঠাৎ বদলে যায় যদি চামড়ার রঙ
হঠাৎ পাল্টে যায় যদি আকাশের দূরত্ব
হঠাৎ করে কমে যায় যদি সীমানার দৈর্ঘ্য
অথবা হঠাৎ যদি সমুদ্র ভোগে শহুরে ওবেসিটিতে
তবে চেঞ্জার-গ্লাসে ঢাকা পিউপিলে খেলে যায়
খেলা করে যায় গোপন জোয়ার-ভাঁটা
জল আসে যায়, স্বচ্ছ দাগ তবু থেকে যায় দুই-পাড়ে
সুরক্ষিত বাধ্য বালিয়াড়ি একান্ত রকবাজ হয়ে ওঠে
আত্মার খিদে চেপে নুন-শো’র ধোঁয়া-ধুলো ঝাড়ে
এসব ইষ্টিকুটুম ছাপোষা উঠোনে রঙিন জলে ভেজে
রঙে ভিজে ভিজে ঢেকে নেয় অন্তর্গত বিকেল
মানসিক সন্ধ্যা নামে ছাঁকনির বাসি চা-পাতায়
রাত গাঢ় হলে জীবজ সিন্দুকে জমে ওঠে অলাজ ভয়
আরো কি হতে পারে? আর কত নিদ্রাক্ষয়!
আসলে আমরা সবাই মৃত্যুর বিষয়-আশয়।