ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
কি করবে, কিছু ভাবলে? হাবুলটা কিন্তু আজকেও গ্যাস দিলো না। খালি ছাইপাঁশ কি যে লেখো? গিন্নির অগ্নিবাণ আমার দিকেই তাক করা।
শোন, কাল থেকে কিন্তু রান্না বন্ধ, হোম ডেলিভারি নাও।
খুবই টেনশানে আছি, একশো শব্দের মধ্যে গল্প চাই। এর মধ্যেই আবার গ্যাস এলো না আজকেও, তাই ভয়ে ভয়ে আর গিন্নির চোখের দিকে তাকালাম না।
খুব ভোরবেলায় মায়ের গলা শুনতে পেলাম যেন, বাবাকে বলছে, শোন কয়লা নেই তা কি আছে, কাঠ, ঘুটে আছে কিছু। আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো।
সকালে উঠে অবাক বিস্ময়ে সচক্ষে দেখলাম, একা হাতে কালি ঝুলি মেখে দমবন্ধ ধোঁয়ার মধ্যে আমার অন্নপূর্ণা মা বারোজনের রান্না চাপিয়েছে।
গোল
‘‘সেইসব দিন ছিল মশাই, মেঘভাঙা বৃষ্টি নেমেছে। ঢং ঢং ঢং...স্কুল ছুটির ঘন্টা...’’
কি মশাই, আকাশটা দেখুন, বাসে সিট পেলেই ঘুম?’’
আমি আকাশ দেখলাম, পাশের ভদ্রলোককেও। সাদামাঠা অভাবী চেহারা, প্রায় সমবয়সী। খুব চেনা লাগছে।
ভদ্রলোক বলে যাচ্ছেন, আমি শুনছি।
‘‘তারপর স্কুলের মাঠে বল নিয়ে কি দাপাদাপি, বল আটকে যাচ্ছে জলে। বারান্দা থেকে অলোকস্যার চেঁচাচ্ছেন, কে শোনে?
ডিফেন্স থেকে মন্টু বলটা লব করলো তিনচারজনের মাঝে। তিমির ক্লিয়ার করতে গিয়ে তুলে দিলো ওদের শুভর পায়ে। শুভ হাফটার্ন নিয়েই গোলার মতো শট, ফিস্ট করে বলটা আমি বারের ওপর তুলে দিলাম।’’
‘‘কখনো না, ওটা পরিষ্কার গোল...’’ আমার প্রতিবাদ।
তাই হবে, ভদ্রলোক কেমন মিইযে গেলেন। চকিতে নেমে গেলেন বৃষ্টির মধ্যেই।
‘‘কি দাদা, বন্ধু নাকি, কত গেলো? চোর-জোচ্চোরে ভরে গেছে...’’
আমি শুধু হাসলাম। হারানো স্কুলবেলা ফিরে পাওয়ার মূল্য আর এমন কি, মাত্র দুহাজার।
আতঙ্কবাদী
স্টেশন চত্বরে এই সাঁঝবেলাতেও বেশ ভিড়। পাঁচ নম্বর প্লাটফর্মের বেঞ্চে বসে শীর্ণকায় এক বৃদ্ধ, সঙ্গে একটা ঢাউস ব্যাগ। পাহারায় সশস্ত্র জওয়ানের দল। গোপন সূত্রের খবর ব্যাগে নাকি বিস্ফোরক সহ, দেশের নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকারক অনেক কিছু আছে। অ্যান্টি বোম স্কোয়াড না এলে ও ব্যাগ খোলা যাবে না।
প্রতিদিনের মতো সেই কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ট্রেনে করে এদিকওদিক ঘুরে এখানে নামতেই হাতেনাতে পাকড়া।
সদর থেকে বড়কর্তারা হাজির, ব্যাগটা খোলা হয়েছে। রিপোর্টারদের কিছু জানানো হয়নি। কড়া জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
গভীর রাতের খবর, বৃদ্ধ একজন কবি। একটা কবিতাও কোথাও ছাপা হয় নি কোনদিন। তাই অবসরের টাকায় বই ছাপিয়ে বিলি করেন ট্রেনে। আপত্তিকর কিছু না পেলেও রাষ্ট্রবিরোধী কাজের সন্দেহে তিনি বন্দী।
বেঁচে থাকার গন্ধ
কি ভালো মা, আর একটু দেবে।
আরতো নেই পিন্টুসোনা।
এটা কি মা?
মিনু থতমত খায়, এ-এটা মাটন বিরিয়ানি।
গোগ্রাসে খেয়ে নেয় পিন্টু।
উঠে পর সোনা, আজ গলদাচিংড়ির মালাইকারি আর ফ্রায়েড রাইস।
পিন্টুর ঘুমচোখে চিংড়ির কিলবিল।
মিনুর এই এক জ্বালা, নিত্যদিন নতুন কিছু চাই।
সত্যি তুমি পারো বটে।
কি করি রিঙ্কু, তোর কাছে ফেলে কাজের ধান্ধায় ছুটি। ফুটপাথের রেস্টুরেন্টে কোনদিন লোক না এলে বাসন মেজে মেলে বাসি খাবার। পিন্টুকে সেই খাবারের গন্ধ চেনাই আর মুখ বুজে খেয়ে নেয় ভাত আলুসেদ্ধ...
চিলিচিকেন আর চাউমিন এনেছি সোনা...
আজ সত্যি কিনেছে মিনু। ঘুপচি ঘর টাটকা গন্ধে ম-ম করে। অথচ ধুমজ্বরে শরীরে আগুন মেখে পিন্টু বিড়বিড় করে... বাজে গন্ধ, পচা...