ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ২২শে শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে (আগষ্ট ১৯৪১ খৃষ্টাব্দ) প্রয়াত হন। উনি প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের পৌত্র ছিলেন।
রবি ঠাকুর বিংশ শতাব্দীর প্রথম অর্ধশতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিত্ব। বিভিন্ন ধরনের লেখালেখি; কাব্যগ্রন্থ, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, গান, অঙ্কন, আরও অনেক কিছুতেই তাঁর প্রভাব অপ্রতিরোধ্যভাবে থেকে যাবে।
রবীন্দ্রনাথ শৈশব থেকে যৌবন পর্যন্ত সঙ্গীত ও আঁকার তালিম নেন দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কাছেই, তার একটি মূল কারণ, জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সঙ্গীত বিপ্লবে মূল ভূমিকা ছিল জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই, রবীন্দ্রনাথের না। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ পিয়ানো বাজিয়ে সুরারোপ করতেন এবং রবীন্দ্রনাথ সুরগুলোতে কথা যোগ করতেন। এইভাবে গান প্রস্তুত হত। রবীন্দ্রনাথের অনেক গানের সুরারোপ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দুই দশক পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের অধিকাংশ গানের সুরকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘‘মায়ের খেলায়’’ ব্যবহৃত ২০টি গানের সুরকার জ্যোতিরিন্দ্রনাথ।
রবীন্দ্রনাথের অঙ্কন ও স্কেচ করার দিকে আগ্রহের মূল উৎস এবং প্রভাব জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর।
রবীন্দ্রনাথ স্ত্রীশিক্ষা ও নারীমুক্তি বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন। পিতা দেবেন্দ্রনাথের আপত্তি সত্ত্বেও তার নিজের সংসারে পর্দাপ্রথাকে তিনি আমলই দেন নি।
রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে মানুষ-ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথ জীবনের শেষ পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। ১৯৩৪ সালে বিহারে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ‘‘ঈশ্বরের রোষ’’ বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ তাঁর সেই বক্তব্যকে অপ্রকিতস্থ বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত সৃষ্টিশীল ছিলেন। তাঁর সমস্ত কিছু মানুষের ভাবনা থেকে মুছে গেলেও গান বাঙালীর ধমনীতে থেকে যাবে। যে কোনো ভাষায় এ রকম একজন লেখকের আবির্ভাব প্রায় অলৌকিক ঘটনা।