ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
জন্মদিন কত আড়ম্বর কত উচ্ছ্বাস
বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন,
কত মানুষের আনাগোনা।
দূরে দাঁড়িয়ে দেখছিল এক পাগল
কখনো হাসছিল, কখনো নীরব
তার কিছু মনে নেই।
মনে নেই তার জন্মদিনটাও।
একদিন তারও কত স্বপ্ন ছিল
সব কেড়ে নিলো প্রেম।
ঝড়ের মত তার জীবনে এসেছিল মীরা
আজ মীরার জন্মদিন,
সেটাই সে ভোলেনি।
নোংরা জামা পড়া উসখো খুসকো চুল
একমুখ দাড়ি উদাস দৃষ্টি সজল।
যত্ন করে ধরা একহাতে একটি গোলাপ,
শুধু মীরার জন্য।
দূর থেকে তাকিয়ে থাকে
দোতলার বারান্দায়...
কখন মীরা বের হবে!
হঠাৎ একটি মেয়ে আসে সজলের হাত ধরে
বলে, চল দাদা বাড়ি চল।
ঐ গোলাপটা আমায় দে?
সজল গোলাপটা আরো সযত্নে
বুকের কাছে নিয়ে আসে, আর উদাস দৃষ্টিতে
বোনের দিকে তাকায় আর বলে এটা শুধু মীরার।
বোন বলে ওঠে দাদা তুই ভুলে যা ওকে।
তুই জানিস না, ওরা কত বড়লোক।
আমাদের মত গরীব মানুষকে
ওরা ব্যবহার করে, ভুলে যা দাদা ওকে, ভুলে যা
তুই কত ভালো ছেলে, কত ব্রিলিয়ান্ট
তুই নিজেকেই ভুলে গেলি।
ওরা তোর মেধাকে কাজে লাগিয়েছে
মীরাকে তৈরি করেছে।
সজল ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে
বোনের দিকে।
শান্ত ভাবে বলে ওঠে
ভদ্রছেলে পেয়ে মীরার পাশে থাকতে বাধ্য করেছে
দারোয়ানের মত...
মীরার যাতে কোন ক্ষতি না হয়,
তোকে মীরার প্রেমিক হতে বলেনি।
সে যদি তোর প্রেমকে স্বীকার করত,
যদি তোকে ভালোবাসতো..., একবার
সে ছুটে আসতো।
সজল ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে
বোনের দিকে।
শান্ত ভাবে বলে ওঠে বনি
তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস।
আচ্ছা বনি সব মেয়েরাই কি এমন হয় !
বনি তুই কাউকে এমনভাবে....
দাদা আমি বুঝেছি তোর কথা
তুই বুঝিসনি নিজের কথা।
আমরা গরীব আমাদের প্রেম থাকতে নেই
ভালোবাসতে নেই।
আমাদের হাঁটতে হয় অনেক পথ
বাঁচার জন্য, কিছু কথা মানতে হয়
সঠিক পথ পাওয়ার জন্য, নিজেকে ঠিক রাখার জন্য।
ফিরে চল দাদা, তোর মেধা দিয়ে
আগে তুই নিজেকে জয় কর।
তারপর অনেক মীরা তোকে জয় করার জন্য
পথ চেয়ে থাকবে....।
সজলের যেন নীরবতা ভাঙে
নতুন ভাবে জন্ম নেওয়ার জন্য.....