ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
সময় মতো বাস অমৃতসর হোটেলের সামনে চলে এসেছে। সবাই বাসে ওঠার অপেক্ষায়…
বাসের সামনে আমি, ছেলে ঋষভ ও স্ত্রী গৌরী পরিবারের বাকি সদস্যের জন্য অপেক্ষা করছি। ঋষভ আগেভাগেই বাসের মধ্যে প্রবেশ করে দোতলা বাসের স্লীপার কোচে উঠে শুয়ে পড়ল। ওর কান্ড কারখানা দেখে উপস্থিত সবাই হাসতে লাগল। অমৃতসরের রাজু সিং অল্প ক’দিনেই ভালো বন্ধু হয়ে গেছে। রাজু সিং-এর সৌজন্যে অমৃতসরে একটা বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসেছি আমরা। ট্যুর অপারেটর তমালদার বিশ্বস্ত বন্ধু রাজু সিং আমাকে বলল,
“আপনার বেটা বহুত ইন্টালিজেন্ট আছে রাজ ভাইয়া... উসকো ধ্যান জড়ুর রাখবে। হামাকে অনেক কিছু কোয়েশ্চন করছিল”।
“ওকে আশীর্বাদ করো রাজুভাই”
“একদম...মেরা প্যার ভরা আশীর্বাদ জরুর থাকবে”
আমি রাজুভাইকে বুকে জড়িয়ে ধরে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে ওর মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে নিলাম।
ধীরে ধীরে আমার শালা বাপ্পা, ভাই, বন্ধু অভিজিৎ-এর পরিবার সহ ট্যুর পার্টির সকলে বাসের কাছে চলে এলো। যে যার মত বাসের সিটে বা স্লিপার কোচে জায়গা করে নিল। দেখলাম, ট্যুর পার্টির আরও একজন সদস্য, চূড়ান্ত ছ্যাঁচড়া নেগেটিভ পাবলিক পাছালবাবুও লাগেজ নিয়ে হাজির। সাথে সাথে পাছালবাবুর পেছনে লাগলাম,
“ও পাছালবাবু, আপনার পাছা ঠিক আছে তো?”
“কি...কি বললেন ভাই?”
“বলছি কি আপনি হাওড়া যাওয়ার ট্রেন ধরবেন বললেন! হঠাৎ আমাদের সাথে মিশন কাশ্মীরে যাবেন?”
অভিজিৎ মুচকি হেসে পাছালবাবুর কাছে এসে,
“একটা বিড়ি দিন পাছালবাবু। চলুন অন্যদিকে যাই। রাজদা শুধু আপনার সাথে ইয়ার্কি করছে”
“আমরা সবাই মিলে বলি ‘মিশন কাশ্মীর’। পাছালদার ‘মিশন হাওড়া’ ধামাচাপা পড়ে যাক...” হাসতে হাসতে আমি একথা বলতেই ছেলে ঋষভ বাসের জানলা থেকে মুখ বাড়িয়ে বলল, “বাবা প্রথমে বলো মিশন কাটরা। তারপর তো মিশন কাশ্মীর”
ঋষভের কথায় সবাই একযোগে হাসতে লাগল। পাছালবাবু আমাকে বললেন,
“আপনার ছেলে আপনার মতই ভীষণ কইয়ে বইয়ে” – জানিনা আমার মন রাখার জন্য বলল কিনা, কারণ যে ভাবে আমি পাছালবাবুর পাছায় ক্রমাগত লেগে রয়েছি।
“ওকে আশীর্বাদ করবেন দাদা। অবশেষে আমরা কাশ্মীর যাচ্ছি। মনের মধ্যে একরাশ নিরাশা কাটিয়ে আমাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ করবেন মাতা বৈষ্ণোদেবী। চলুন বাসে উঠে পড়া যাক”।
রাতের বাস কাটরার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল। মনে মাতা বৈষ্ণোদেবী দর্শনের ইচ্ছা মাথায় রেখে আমার স্ত্রী গৌরী বাসের একটি কোচে একা শুয়ে পড়ল। ঋষভ, ওর মায়ের কাছে বসে জানলা দিয়ে বাইরের দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল। আমিও একটা নির্দিষ্ট সিটে অভিজিত-এর পাশে বসে পড়লাম। পাছালবাবুও পাশে বসে খোশমেজাজে গল্প করতে লাগল। সুযোগ বুঝেই আমি একটু টিপ্পনি কাটলাম পাছালবাবুর উদ্দেশ্যে,
“একটা বিড়িও দেবেন না অভিজিৎকে... ওর ঠোঁট কিন্তু ক’দিনে বেশ কালো হয়ে গেছে আপনার মত”... বলেই হাসতে লাগলাম। অভিজিৎ ও পাছালবাবুও আমার হাসিতে সঙ্গ দিল। সেই হাসি সমগ্র বাসের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। সকলের ভীষণ আনন্দের মধ্যেই বাস ছুটে চলেছে কাটরার দিকে… রাতের আলোর মধ্যে অমৃতসর শহরের জাঁকজমক চোখের পড়ার মত। সেজে উঠেছে বিভিন্ন দোকান। রাতেও অনেক দোকান খোলা। বড় বড় হোটেলগুলো আলোতে সেজে উঠেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে স্বর্ণমন্দিরের চূড়া। বাসটি আস্তে আস্তে ন্যাশনাল হাইওয়ের পথ ধরল। বাসের দুলুনিতে আমার চোখে ঘুম চলে এলো। আমি স্লিপার কোচের মধ্যে প্রবেশ করলাম।
ঠিক সকাল ছ’টায় বাস কাটরায় পৌঁছে যায়। কাটরায় নামার পর দেখি ট্যুর অপারেটর তমালদা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমাকে দেখেই তমালদা ছুটে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ওয়েলকাম কাটরা, রাজ। আমার গিন্নী ও ছেলের সাথে থেকে অনেক অসাধ্যসাধণ করেছ তোমরা। এবার ভালো করে পুরো কাশ্মীর ঘোরানোর দায়িত্ব আমার। কথা দিলাম সব্বাইকে"
“সে নাহয় ঠিক আছে। তবে রাজু সিং না থাকলে অমৃতসরের ওই ফাঁড়া কাটিয়ে আসতে পারতাম না। মানুষটা সত্যিই ভীষণ উপকারী”
“হ্যাঁ ভাই, রাজু সিং আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত। এখানে আসলেই ও আমার সব কিছু সামলে নেয়”।
তমালদা লাগেজ নিজের হাতে করে নামাতে লাগল। আমি বারণ করলেও তমালদা শুনল না। ট্যুর পার্টির বাকি লোকজন নামতেই তমালদা সবাইকে অভিবাদন জানাল। তমালদা আমার দুটো ভারী লাগেজ নিজের হাতে তুলে নিতেই আমার স্ত্রী বলল,
“একি করছেন তমালদা? আপনি শুধু শুধু কষ্ট করছেন। আমরা নিয়ে নিচ্ছি"।
“কি বলছেন বৌদি, নিজের ভেবে নিন আমাকে। আসুন আসুন আর দেরী করবেন না"।
অগত্যা ট্যুর পার্টির সবাই তমালদার পিছু নিল। স্ত্রী গৌরীসহ পরিবারের বাকিরা যে যার লাগেজ নিয়ে তমালদার বুক করা গেস্ট হাউসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো।
(২)
পাহাড়ে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিবেষ্টিত কাটরাতে যথেষ্ট ঠান্ডার আবহাওয়া... আমাদের ট্যুর অপারেটর তমালদা কেরালা থেকে প্লেনে প্রথমে জম্মুতে নেমে তারপর রাতের বাসে চেপে কাটরাতে পৌঁছে গিয়েছিল। ব্যাপারটা একটু খুলে বলা যাক, আসলে আমাদের ট্যুরের দায়িত্ব নিয়েছিল তমালদার ছেলে ও স্ত্রী। কিন্তু তমালদার যে ব্যবস্থাপনা সেই তুলনায় খামতি থাকবেই তা বলা বাহুল্য। তার ওপর অমৃতসরে একটি মর্মান্তিক ঘটনা (সে নাহয় পরে কোনও একদিন বলা যাবে) বেশ কোনঠাসা করে দিয়েছিল। সেখান থেকে বের হয়ে আসা একেবারে স্বপ্নের মত। আমি সামান্য কিছু ভূমিকা পালন করতে পেরেছি এতেই আমার আনন্দ। মানুষ যে কত নেগেটিভ হতে পারে, কিছু ঘটনা না হলে বোঝা যায়না।
যাক, অবশেষে আমরা কাটরায় এসে গিয়েছি, এবার আমরা তমালদার তত্ত্বাবধানে... তমালদার কথায় জানতে পারলাম গতরাতে বেশ বৃষ্টি হয়েছে। যার জন্য বেশ শীত শীত অনুভূত হচ্ছে, ব্যাগ থেকে একটা শাল বের করে নিয়েছে গৌরী। যে রাস্তা দিয়ে গেস্ট হাউসের দিকে যাচ্ছি আমরা, চারিদিক শুধু সবুজ অরণ্যে পরিবেষ্টিত। সাথে বিশালাকার পাহাড় ঘিরে রয়েছে সমগ্র অঞ্চলটিকে। আকাশের নীল আর অরণ্যের সবুজের মেলবন্ধনে অপরূপ শোভা বর্ধন করেছে সর্বত্র। দূরে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের চূড়ায় একটা সাদা বিন্দুর মত হয়ে থাকা মন্দির। তমালদার কথায় জানতে পারলাম, ঐটাই মাতা বৈষ্ণোদেবীর পবিত্র মন্দির। শুনেই গৌরী ভক্তিভরে প্রণাম করে নিল। গেস্ট হাউসে আসার পথে আমি চারিদিকের সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে শুধু তাকিয়ে দেখলাম। ঋষভকে নিয়ে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে নিলাম। আমার শালা বাপ্পাও আমাকে নিজের কয়েকটা ছবি তুলে দিতে বলল,
“চারিদিকের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে আমি বাকরুদ্ধ। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার কিছু ছবি তুলে দাও দাদা"
ওর কথায় হাসতে হাসতে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে দিলাম। এরপর উপস্থিত সবার সাথে বেশ কয়েকটা গ্রুপ সেলফি তুলে নিলাম। আমি, গৌরী ও ঋষভ মন্দিরের দিকে তাকিয়ে ভক্তিভরে মাতা বৈষ্ণোদেবীকে প্রণাম করে নিলাম। ট্যুর পার্টির সকলে তমালদার সাথে গেস্ট হাউসে চলে আসে। খুব সুন্দর সাজানো গোছানো গেস্ট হাউস। গেস্ট হাউসের সামনে বেশ জায়গা জুড়ে ফুলের বাগান। হরেক রকম ফুলের বাহার। দেখলেই মনের মধ্যে যেন শান্তি আসে। ঘরগুলোর ব্যবস্থাপনা ভীষণ ভালো। গৌরী, বাপ্পা, অবশ্যই ঋষভের খুব ভালো লেগেছে। তমালদার ব্যবস্থাপনার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করল। হঠাৎ পাছালদাকে দেখতে পেয়েই মাথায় দুষ্টুমি এল,
“কি পাছালদা কেমন বোধ করছেন? পাছার ব্যাথা কমে গেছে তো?”
“পাছালদা এখন বিন্দাস আছে। দিন একটা বিড়ি"
পাছালদার থেকে একটা বিড়ি নিয়ে অভিজিত মুচকি হেসে আমাকে চোখ টিপে দিল। আমার ভীষণ হাসি পেল। পাছালবাবু ভীষণ রেগে গেলেও কিছুই বলল না।
হোটেলে পৌঁছনোর পরেই তমালদা রান্নার রাঁধুনির সাথে একপ্রস্থ আলোচনা সেরে নিল। তারপর একটা ঘরে থাকার ব্যবস্থা করেই ট্যুর পার্টির সকল সদস্যের কাছে ফিরে এল। গেস্ট হাউসের রুমের চাবি সকলের হাতে একে একে ধরিয়ে দিল। আমাদের সবাইকে বলল,
“তোমরা ফ্রেস হয়ে নাও ... ব্রেক ফাস্ট ও চা কফির ব্যবস্থা করছি"।
ঋষভ ও গৌরীকে নিয়ে আমি রুমের মধ্যে চলে গেলাম। বাপ্পাও একই রুম শেয়ার করার জন্য আমাদের সাথে চলে এল। এছাড়া বাকিরাও যে যার রুমে চলে গেল। বেশ সুন্দর সাজানো গোছানো বড় রুম। অ্যাটাচ দুটো বাথরুম আছে। চারজনের শোবার জন্য বেশ বড় খাট। খোলা জানলার বাইরে তাকালেই নীল আকাশের সাথে মিশে গেছে সুবিশাল পাহাড়। দেখা যাচ্ছে মাতা বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। আমি ঋষভকে জড়িয়ে ধরে সেই মনোরোম দৃশ্য তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছি। বাপ্পা গৌরীকে বলল,
“বেশ ভালোই ব্যবস্থা, বল দিদি। তমালদা সত্যি জিনিয়াস, রাজদার কথা রেখেছে…”
“আমি ভীষণ খুশি"। --- গৌরী ঋষভকে জড়িয়ে ধরে বলল।
আমরা একে একে সবাই ফ্রেস হয়ে রুমের বাইরে বেরিয়ে এলাম। প্রকৃতির খোলা আকাশের নিচে তমালদা ব্রেকাফাস্টের আয়োজন করেছে। তমালদা সবাইকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালো,
“ব্রেকফাস্টের জন্য সামান্য কিছু আয়োজন। বাটার নান, মটর পনিরের কারি আর কাজু বরফির সন্দেশ ও পান্তুয়া। ছোলার ডালও আছে। ঠিক আছে তো?”
“খুব সুন্দর তমালদা। এর থেকে ভালো কিছু হতেই পারে না"... এরপর পাছালবাবুর দিকে তাকিয়ে বললাম,
“ও পাছালবাবু, .দারুণ ব্রেকফাস্ট, কি বলেন?"
“পাছালদা খাওয়ার পর আমরা দু’জনে গেস্ট হাউসের ছাদে যাব। জমিয়ে বিড়ি ফুঁকবো। ঠিক আছে"... অভিজিৎ বেশ মজা নিচ্ছে আমার কথায়। মুচকি হেসে চোখ টিপে দিল। পাছালবাবু কিন্তু চুপটি করে রইল।
ব্রেকফাস্ট করার সময় তমালদা সবাইকে বৌষ্ণোদেবী দর্শনের কথা বলল। পরিকল্পনা অনুযায়ী আজ রাতেই পায়ে হেঁটে বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরের উদ্দেশ্যে সকলেই যাত্রা শুরু করবে।
(৩)
কাটরায় মাতা বৈষ্ণোদেবীর দর্শন করতে হলে মূল মার্কেটে গিয়ে পড়চা কাটতে হয়। তমালদা জানাল,
“রাতে বৈষ্ণোদেবী মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রার জন্য পড়চা কাটতে হবে। দুপুরের লাঞ্চ করে একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকালের দিকে রাজ তোমাকে নিয়ে মার্কেটের দিকে ঘুরতে যাব। মার্কেটের মধ্যে পড়চার অফিস পড়ছে। তখনই কেটে নেব"
কথা অনুযায়ী তমালদা আমাকে নিয়ে বিকালের দিকে ঘুরতে বেরোল। অভিজিৎ, বাপ্পাও আমার সঙ্গী হল। ওদের দেখে ঋষভও বায়না করল। সেও সেজেগুজে বেরিয়ে কাটরার রাস্তায় আমার সাথী হল। বিকেলের পড়ন্ত শোভা ছোট্ট পাহাড়ী এলাকায় যেন সবুজের ছটা। নীল আকাশ যেন মায়ার দৃষ্টি নিয়ে ঋষভের মুখের দিকে পরম স্নেহে তাকিয়ে আছে। রাস্তার একপাশে বসেছে কত ছোট ছোট দোকান। মানুষের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ার মত। অনেক ট্যুরিস্ট বিভিন্ন দোকানে ভিড় করেছে। তারই মাঝে রাস্তার মধ্যে বেশ কিছু তীর্থযাত্রী “জয় মাতাদি” বলে উচ্চস্বরে বলতে বলতে যাচ্ছে। সবকিছু নিয়ে এক মোহময় পরিবেশ আমার মনকে শান্তি এনে দিল। ঋষভও বেশ খুশি মনে আমার হাত ধরে চারিদিকের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে লাগল...
সবকিছু দেখে আমি অবাক হয়ে ভাবছি কাটরার মত ছোট্ট একটি পাহাড়ী শহর কি অপরূপ সাজে সেজে রয়েছে। যান্ত্রিক কলকাতা বা হাওড়ার দুষণযুক্ত পরিবেশ থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এমন একটি পবিত্র শহর যেখানে মাতা বৈষ্ণোদেবী বিরাজমান, এমন জায়গায় যেন শান্তির বাতাবরণ। পাহাড়ের গা ঘেঁষে বেশ চওড়া রাস্তা, যেখানে দূরপাল্লার বাস, দামী দামী গাড়ি এবং বাইক সবই চলছে। আর চলছে টোটো। বেশ জমজমাট। তমালদা আমাদের সব কিছু দেখাতে দেখাতে একদম কাটরার মূল মার্কেটে চলে এল। যেখানে বিশাল বড় বাস টার্মিনাল। তার পাশেই বৌষ্ণোদেবী মন্দিরে প্রবেশেপথের পড়চার অফিস। সকলের আধারের জেরক্স আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিল তমালদা। সেইগুলো দেখিয়ে তমালদা অফিস থেকে রাত এগারোটায় মন্দিরের উদ্দেশ্যে যাত্রার পড়চা কেটে নিল।
রাত এগারোটায় আমি, গৌরী-ঋষভ সহ পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে বৌষ্ণোদেবী মাতা দর্শনের উদ্দেশ্যে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। এছাড়াও ট্যুর পার্টির অনেকেই ছিল। কাটরার মার্কেটের রাস্তা ধরে সবাই এগোতে লাগলো... এত রাতেও মার্কেটে অনেক লোকের সমাগম। হাঁটতে হাঁটতে অটোস্ট্যান্ডে আসার পর থেকেই বলতে গেলে যাত্রা শুরু... মিলিটারিরা সকলের পড়চা দেখে এবং সবকিছু সরঞ্জাম চেক করেই যাবার অনুমতি দিল। জওয়ানেরা জানিয়ে দিল, মোবাইল, ক্যামেরা নিয়ে যাচ্ছে ঠিক আছে। ওখানে গিয়ে আলাদা ভাবে রাখার ব্যবস্থা আছে। মন্দিরের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ওখানে উপস্থিত জওয়ানেরা এগুলো দেখতে পেলেই ছুঁড়ে ফেলে দেবে। ভীষণ কড়া পাহাড়ার ব্যবস্থা সেখানে। আমরা পাহাড়ি রাস্তা ধরে যাত্রা শুরু করলাম। ক্রমশঃ ওপরের দিকে উঠতে লাগলাম। চোখে পড়ল, শয়ে শয়ে দর্শনার্থীরা মাতাদির দর্শনে যাচ্ছে, আবার অনেকেই মাতার দর্শন সেড়ে ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসছে (এই সকল যাত্রীরা সকাল বেলা যাত্রা শুরু করেছিল। সেখানে পৌঁছে বৈষ্ণোদেবী মায়ের দর্শন করে রাত এগারোটার সময় ফিরে আসছে)। প্রত্যেককে দেখে আমি-গৌরী এবং বাকিরা যারপরনাই হতবাক। দেখছি কষ্ট আর ক্লান্তি থাকলেও প্রত্যেকের মুখের মধ্যে ভক্তি ও আনন্দের বহিঃপ্রকাশ, প্রায় সকলের মুখে “জয় মাতাদি, জয় মাতাদি... জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি...” শুনে আমাদের ভীষণ ভালো লাগলো। আমি ও ঋষভ “জয় মাতাদি, জয় মাতাদি” উল্লাসে এগিয়ে চললাম পাহাড়ী রাস্তা ধরে মাতার মন্দিরের দিকে। মাতাজীর মন্দিরের অবস্থান পাহাড়ের ওপরে। অগণিত ভক্তের আসা যাওয়ার মধ্যে “জয় মাতাদি, জয় মাতাদি... জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি...” প্রতিধ্বনি শুনে গৌরীর মনেও একরাশ ভক্তির উদ্রেক হল। রাতের অন্ধকারে অনেক দূর থেকে পাহাড়ের ওপরের দিকে দেখতে পাওয়া মন্দিরের মধ্যে জ্বলতে থাকা টিম টিম করা আলোর দিকে তাকিয়ে ভক্তিভরে প্রণাম জানিয়ে গৌরী মনে মনে বলল, “মা গো তোমার চরণে আসছি। যত কষ্ট পাই, তোমার কাছে আমরা ঠিক পৌঁছবই"।
আমি গৌরীর দিকে তাকিয়ে বললাম,,
“কি গো গৌরী, কষ্ট হচ্ছে?”
“না গো। কষ্ট হলেও মায়ের চরণে ঠিক পৌঁছে যাব"
“এটাই চাই। জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি গৌরী। শুধু এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের প্রত্যাবর্তনের লড়াই নিজেদেরই করতে হবে। যতই দুঃখ, কষ্ট আসুক না কেন আমাদের বাবুকে জীবনের লড়াইয়ে সক্ষম হতেই হবে। সেই হাওড়া থেকে এখানে এসেছি, মাতাজীর কাছে পৌঁছে আশীর্বাদ চেয়ে নেবো"
গৌরীর চোখে জল। সে জানে এই তীর্থস্থানে আসার জন্য আমার কতখানিই আকুতি ছিল। আমার সবকিছু সমস্যা, লড়াইয়ের একমাত্র সাক্ষী সে। মানুষের জীবনে শান্তি আসুক, মনে-প্রাণে মাতাজীর কাছে সে প্রার্থনা করবে।
(৪)
নতুন উদ্যমে গৌরীকে সাথে নিয়ে ধাপে ধাপে এগোতে লাগলাম পাহাড়ী পথ ধরে। পাহাড়ের কোল ঘেঁসে থাকা রাস্তাটি এগিয়ে চলেছে সর্পিল আকারে। টিনের শেড ও জাল দিয়ে রাস্তাটি আচ্ছাদন করে রেখেছে যাতে দর্শনার্থীরা সাবধানে সেই পথ দিয়ে মায়ের মন্দিরের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। সেই পথ অনুসরণ করে সকলেই এগিয়ে চলেছে। রাস্তার ধারে আছে অজস্র মাতাজীর নামাঙ্কিত বিভিন্ন সেবকের স্টল। কোথাও পানীয় জলের ব্যবস্থা। কোথাও একটু বিশ্রাম নেওয়ার স্থান। কোথাও বা আছে চা, কফি, সরবৎ বা লস্যির স্টল। ধীরে ধীরে অনেকটা পথে এগিয়ে এসেছি আমরা। আমাদের সাথে আরও অনেক দর্শনার্থীরাও এগোচ্ছে। গৌরী চেহারায় একটু স্থূল। তাছাড়া সেভাবে দ্রুত হাঁটতে পারে না। ছেলে ঋষভকে নিয়ে বাপ্পা অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে।
গৌরীর ধীর গতিতে হাঁটায় আমি একেবারেই বিরক্ত হলাম না। গৌরী বলল,
“আমি একটু ধীর গতিতে এগোচ্ছি। তুমি এগিয়ে যাও"।
“গন্তব্য তো একটাই। এই রাস্তা ধরে এগোলেই মা’য়ের দেখা পাবো আমরা। কেউ আগে যাবে আবার কেউ পরে যাবে। সকলে এগিয়ে যাক, আমি আমার গৌরীর সাথেই আছি"
“ঠিক আছে...ঠিক আছে। মাতাজীর স্মরণে এসে এত রোমান্টিক হওয়ার প্রয়োজন নেই"
“তুমি হাত ছাড়লেও আমি ছেড়ে যাবো না। হাম সাথ সাথ হ্যায়...এক দু’জে কে লিয়ে। মাতাজী দেখছেন, উনি ঠিক আশীর্বাদ করবেন" - আমি হাসতে হাসতে বললাম।
গৌরীও আমার কথা শুনে হেসে ফেলল। এরপর নিজের মত করে চলতে শুরু করল। পাহাড়ী রাস্তা যতই উঁচু হোক, রাতে হাঁটার ক্লান্তি নিয়ে আসলেও গৌরী কিছুতেই দমবে না স্থির করল। সে অবিচল লক্ষ্য নিয়ে একমনে মাতাজীর উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলেছে। তমালদা যাওয়ার আগে সকলকে বলেছে, “এই রাস্তা সকলেরই আপন... মাতাজীর উদ্দেশ্যে প্রত্যেকে নিজের মত করে এগিয়ে যাবে। কেউ সাথে থাকবে তার কোনো মানে নেই। একা একাই মাতা বৈষ্ণোদেবীর নাম করে এগিয়ে যাবে…”
তমালদার কথা মনে করে গৌরী যতই এগোতে থাকে ওর মনে হয়, রাতের এই রাস্তা কত সুন্দর, পাহাড়ের যত ওপরের দিকে যাচ্ছে, চারিধারে আলোর ঝিকিমিকি। নিচের দিকে তাকালে কাটরার টাউনকে মনে হচ্ছে অসংখ্য জোনাকির মেলা... কি সুন্দর তার মহিমা। রাতের এই অভিযান যেন রোমাঞ্চে ভরা। জীবনে এমন সুযোগ হয়ত নাও আসতে পারে। ক্লান্তি আসলে আসুক, তবুও সে এগিয়ে যাবে নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে। ক্লান্তি লাগলেই আমি গৌরীকে মাঝে মাঝে রাস্তার পাশে থাকা বিশ্রামের জন্য রাখা বেঞ্চে বসতে বলছি, রাস্তার পাশে থাকা স্টল থেকে জল, চা বা কফি পান করে নিচ্ছি। গৌরীকে নিয়ে প্রায় অনেকক্ষণ হেঁটে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমরা অনেকটাই এগিয়ে এসেছি। দূর থেকে মনে হলো চেনা গলায় কারা যেন আসছে। ঠিক ধরেছি আমি… অভিজিৎ আসছে ওর পরিবার নিয়ে। আরিব্বাস, এত মেঘ না চাইতেই জল। ঠিক তার পেছন পেছন পরিবার নিয়ে পাছালবাবুও আসছে। তাকে দেখেই আমার উৎসাহ বেড়ে গেল। ভাগ্যিস এমন একটা ট্যুরে পাছালবাবুর মত এক পাবলিক ছিল। যাক মজা করে যাওয়া যাবে তাহলে…
“আরে পাছালদা যে। আপনার পাছার হাল কেমন?”
ওই স্থানে উপস্থিত সকলেই শুনেছে। গৌরী ভাবল, এবার নির্ঘাৎ পাছালবাবু আমাকে ভস্ম করে দেবে, সেটা ভেবেই গৌরী আমাকে বলল,
“ধর্মস্থানে এসে এইসব ফাজলামি না করলেই নয়!"
অভিজিৎ হাসতে হাসতে পাছালবাবুকে বলল,
“পাছালদা একটু বিশ্রাম নিয়ে বিড়ি ফুঁকে নেওয়া যাক"... আমার দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখ টিপে মুচকি হাসতে যাবে কি! পাছালদা অভিজিৎকে থামিয়ে বলল,
“আরে রাজদা ঠিকই বলেছে, পাছায় সত্যিই খুব ব্যাথা। এতটা খাড়াই রাস্তা হেঁটে আসা আমার পক্ষে সত্যিই কঠিন। চলুন একটু বিশ্রাম নিয়ে ফুঁকেই নেওয়া যাক"
আমি শুনেই খুব জোর হেসে ফেললাম। আমার হাসিতে গৌরী খুব রেগে গেল। কিন্তু পাছালদার স্ত্রী-মেয়ে বারণ করলেন গৌরীকে,
“এই একটা মানুষই এই ট্যুরটাকে আনন্দে মাতিয়ে রেখেছে যাই বলুন”
পাছালদা এবার ওর স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইল খানিকক্ষণ, সকলে ভাবল এই বুঝি নিজের স্ত্রীকে রাতের অন্ধকারে পাহাড় থেকে নিচে ফেলে দেবে, কিন্তু পাছালদা অবাক হয়ে বলল, “আমি আমার গিন্নীর সাথে ১০০% সহমত। ভীষণ পজিটিভ মানুষ রাজদা”
আমাকে কে দেখে তখন, বুকের ছাতি বেড়ে পুরো অমিতাভ বচ্চন হয়ে গেছি। একটু স্টাইল নিয়ে বললাম,
“কিউ… দোস্ত লোগ… আগে বড়ো”…
রাস্তার মাঝে মাঝেই আছে মিলিটারিদের ছাওনি করা ছোট ছোট ক্যাম্প। কোথাও হচ্ছে পাহাড়ী রাস্তার মেরামতির কাজ, সেবকদের নতুন ছোট ছোট অফিস ঘর তৈরীর কাজ। এছাড়াও আছে দর্শনার্থীদের হেলথ চেক আপের জন্য বিভিন্ন মেডিক্যাল ক্যাম্প। বেশ সুসংগঠিত আয়োজন। ব্যবস্থাপনা দেখলেই মনের মধ্যে একরাশ ভক্তির সঞ্চার হয়। তেমনই একটি ক্যাম্প সামনে থাকায় রাজ পাছালবাবুকে শ্রুশুষার জন্য সেখানে যেতে অনুরোধ করল,
“আমি সবসময়ই পাছালবাবুর পাছাকে সম্মান প্রদর্শন করেছি। একটু ভাবলেই বুঝতে পারবেন। কেউ না বুঝুক অভিজিৎ সেটা ভালোই বুঝবে"
অভিজিৎ এবার খুব জোরে হাসতে লাগল। রাত্তিরের নিস্তব্ধ রাস্তায় অভিজিতের এমন হাসিতে আশেপাশের বেশ কিছু জনতা আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
(৫)
অভিজিৎ পাছালবাবুর থেকে একটা বিড়ি নিয়ে ফুঁকতে শুরু করে দিল। তারপর আমার সাথে বক বক করতে লাগল। পাছালবাবু আমার সম্বন্ধে গৌরীকে বলল,
“ভাগ্য করে এমন একটি হাজব্যান্ড পেয়েছেন। ভীষণ পজিটিভ মানুষ। আমি এই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। আর দেখুন রাজদাকে, কোনো ক্লান্তি নেই। একগাল মুখে হাসি। আর এমন মজার কথাতেই সারা ট্যুরটাকে মাতিয়ে রেখেছেন। অমৃতসরের ঐরকম ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও কি অসম্ভব এনার্জেটিক। আমাকে বিভিন্নরকম ভাবে উষ্কানিমূলক কথা বলেই হাওড়া যাওয়া থেকে আটকেছেন। কাটরাতে আসার ব্যাপারে আগ্রহ জন্মেছে এই রাজদার জন্যই... সারাক্ষণ যেভাবে আমাকে লেগপুল করে গেছেন"... বলেই হাসতে লাগল।
“ও সকলকে খুব সহজে আপন করে নেয়। এটাই ওর সবচেয়ে বড় দোষ না গুণ আমি জানিনা। জীবনে অনেকেই ওকে ঠকিয়েছে কিন্তু ও সর্বদা হাসিমুখেই থেকেছে"
পাছালবাবু বিড়িও ফুঁকছে আর গৌরীর কথা মন দিয়ে শুনছে। তারই মধ্যে গৌরী বলল,
“ও বলেছে আমি যাকে বিশ্বাস করে ঠকেছি দোষ কি আমার!... মোটেই তা নয়, যে আমাকে ঠকিয়েছে তারই দোষ। তাকে তার শাস্তি পেতেই হবে!"
পাছালবাবুর বিড়ির ধোঁয়া ওর স্ত্রীর নাকে যেতেই ভীষণ রেগে গেল। ওর স্ত্রী সাথে সাথে বলল,
“আর ইনি সারাজীবন এই বিড়িতেই বিশ্বাস টিকিয়ে রাখলেন। আমাকে ভুলে যাবে কিন্তু বিড়িকে কখনোই ভুলবে না"
এই কথায় গৌরীর সাথে আমি এবং অভিজিৎও হাসতে লাগলাম।
প্রায় কুড়ি মিনিট বিশ্রাম নেওয়ার পর আমরা এবার সবাই একত্রে হাঁটতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর হঠাৎ আমার চলার পথে একজন সুন্দরী মহিলা হোঁচট পেয়ে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়তে যাবে কি! আমি মহিলাটিকে ধরে নিই। মহিলাটি এমনভাবে আমাকে ধরেছিল পাছালবাবু সেটা লক্ষ্য করেই গৌরীর মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখল। কিন্তু গৌরীর তরফ থেকে তেমন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখতে পেল না। উলটে গৌরী সেই মহিলার দিকে এগিয়ে তাকে জলের বোতল দিল। পাছালবাবুর স্ত্রী পাছালবাবুকে বলল,
“রাজদার প্রতি ওনার স্ত্রীর বিশ্বাস আছে বুঝলে। ভগবানের স্থানে এসে এইসব কুচুটে জিনিস মনে এনো না...!"
এই কথা শুনে অভিজিৎ আবার হাসতে লাগল। পাছালবাবুর প্রেস্টিজের পুরো গ্যামাক্সিন হয়ে যাচ্ছে। অগত্যা মুখ ভার করে এগোতে লাগলেন। সেই দেখে আমি আবার লেগপুল করলাম,
“কি হলো পাছালবাবু? পাছা ফুলে ঢোল হয়ে গেল নাকি..." ... একথা শুনেই পাছালবাবু ভীষণ হেসে ফেলল।
“আমরা একসাথেই না হয় ধীরে ধীরে এগোবো। তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। তমালদা বলেছিল তো, আস্তে আস্তে হাঁটতে। মা’র কাছে একটা সময় পৌঁছলেই হলো। মায়ের দরজা তার সন্তানদের জন্য সবসময়ই খোলা আছে”।
আমরা সবাই ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ভোর চার’টের সময় পৌঁছে গেলাম পাহাড়ের প্রায় শেষ প্রান্তে মাতাজীর দোরগোড়ায়। সেখানকার পরিবেশ দেখে আমরা সকলেই বিষ্ময়ে হতবাক। কাতারে কাতারে ভীড় দর্শনার্থীদের। যদিও তারা কেউ মন্দির দেখতে পাচ্ছে না। একটা গুহার মত দেখতে, মাতাজীর মন্দিরের দরজায় যেতে হলে সেখান দিয়েই যেতে হবে। তারপর তো মাতাজীর দর্শন। দর্শনার্থীদের বিশাল লাইন তৈরী হয়েছে। সকলের হাতেই প্রসাদ ও ফুলের বাক্স। একজনকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম, প্রসাদ কেনার অফিসে গিয়ে প্রসাদ কিনতে হবে। এখানে আগেভাগেই পৌঁছে গিয়েছিল বাপ্পা ও আমার চ্যাম্পিয়ন ছেলে ঋষভ। বাপ্পা বুদ্ধি করে সেই অফিসের সামনে লাইন দিয়েছিল। প্রসাদ ও ফুল কিনে রেখেছিল, কিন্তু শুধুমাত্র আমার আর গৌরীর জন্য। ওরা জানতো না, অভিজিৎ, পাছালবাবু সাথে আসছে। অগত্যা ওরা অফিসের সামনে প্রসাদ কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে গেল।
বাপ্পা আমাকে বলল,
“রাজদা এখানে আলাদাভাবে জুতো এবং প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা আছে। চলো রেখে আসি। অন্যরা লাইন দিয়ে থাকুক"
আমি নিজের এবং বাকি সকলের জুতোগুলো একটা প্লাস্টিক ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলাম। মোবাইল ও অন্যান্য জিনিসপত্র হাতে নিয়ে সেই বিশেষ জায়গায় রাখতে বাপ্পাকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গেলাম। ওখানে থাকা সেবকদের জিজ্ঞেস করে একটি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে একটা ধাপে, সেখানে দেখতে পেলাম একটা বিশাল হল ঘর আর সেই ঘরে থাকা অনেকগুলো স্টিল আলমারী। একটা আলমারীর কাছে গিয়ে তারই মধ্যে একটা প্রকোষ্ঠে আমরা হাতে থাকা সমস্ত জিনিসপত্র, জুতো আর মোবাইলগুলো রেখে দিলাম। ঐ প্রকোষ্ঠগুলো সবই লকার সিস্টেম। তারপর তালা দিয়ে চাবিটা আমি নিজের প্যান্টের পকেটে সযত্নে রেখে বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে। তারপর দর্শনার্থীদের লাইনে ফিরে এলাম। সামনেই দেখছি মিলিটারির পাহাড়ায় পরিবেষ্টিত মাতাজীর মন্দির। দর্শনার্থীদের মিলিটারিরা চেক করে তবেই গুহার মধ্যে প্রবেশ করাচ্ছে।
(৬)
মিলিটারির পাহাড়ায় পরিবেষ্টিত মাতাজীর মন্দির। আমরা দেখলাম, সকল দর্শনার্থীদের ভীষণ কড়া উপায়ে চেক করছে। বেশ কিছুটা এগোবার পর পুরুষ ও মহিলাদের দুটো আলাদা লাইন হয়ে যাচ্ছে। মহিলাদের লাইনে উপস্থিত আছে মিলিটারির মহিলা সদস্যরা। মিলটারিদের চেক্ করার ধরণও ভীষণ সাঙ্ঘাতিক। বেশ কয়েকজন দর্শনার্থীদের থেকে মোবাইল ও পকেটে থাকা নেশার জিনিস কেড়ে নিয়ে অবহেলার সাথে ফেলে দিচ্ছে একটা ডাব্বায়। আরও কয়েকদফা চেক করার পর সবাই প্রবেশ করল গুহার মধ্যে থাকা মন্দিরে। আমরাও একই ভাবে গুহার মধ্যে প্রবেশ করলাম। কী সুন্দর মাতাজীর রক্ষণাবেক্ষণ সেখানে, দেখে মন ভরে গেল। সকাল সাত’টার সময় বৈষ্ণোদেবী মাতাজীর আরতি হয়। পুরোহিতরা মাকে সাজিয়ে ভক্তিমূলক গানের মাধ্যমে আরতি করেন। আরতির সময়েই প্রবেশ হওয়াতে গৌরী বিগলিত হয়ে পড়ল। চোখের কোণে অবিশ্রান্ত বারিধারা নিয়ে বলল,
“মায়ের কৃপা না থাকলে এমন সন্ধিক্ষণ হয় না। আমাদের পরম সৌভাগ্য যে মায়ের আরতীর সময়ে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের মনোবাঞ্ছা যেন পূরণ করেন মা"।
“ঠিক আছে গৌরী। মা’য়ের কাছে এসে আবার কান্নাকাটি কেন?
“ও তুমি বুঝবে না। এ আমার আনন্দের কান্না। মাকে দেখতে পাওয়ার কান্না"।
আমি জানি গৌরীর চোখের জলের কারণ। তাই মনে মনে বললাম, “জানি তো গৌরী। আমাদের জীবনযুদ্ধ মোটেই সহজ নয়। কত বাধা, প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজ আমরা মাতাজীর দোরগোড়ায়। কেঁদে মন হালকা করে নাও”
আরতির নির্দিষ্ট সময় আমরা আরতির কক্ষে বসে পড়লাম, তবে সেই কক্ষে মাতাজীর মূর্তি নেই। এখানে ভিডিও স্ক্রিনে সব কিছুই দেখা যাচ্ছে। মাতাজীর কাছে বেশ ক’জন পুরোহিত উপবিষ্ট আছেন। সেই কক্ষে বেশী লোকের সমাগম হয় না, এইটাই নিয়ম। প্রায় দু’ঘন্টা আরতি দেখার পর মাতাজীর মূল কক্ষে প্রবেশ করে মূর্তি দর্শণ করলাম। ভক্তিভরে প্রণাম করার পর ওখানে থাকা মিলিটারি ও সেবকদের নির্দেশ মেনে আমরা মাতাজীর কক্ষ থেকে বেরিয়ে অন্য একটি ছোট কক্ষে প্রবেশ করলাম। সেই কক্ষে গঙ্গার জলপ্রবাহ বয়ে যায়, কী শীতল জলের প্রবাহ! তারই ছোঁয়া অনুভব করলাম। সেই জলপ্রবাহের কিছু কণা মন্দির সংলগ্ন মার্বেলের মেঝেতে গড়িয়ে এসেছে, মেঝেতে কার্পেট থাকায় সেই কার্পেট ভিজে ঠান্ডা হয়ে যায়, খালি পায়ে হাঁটার দরুণ হাড়কাঁপানোর ঠান্ডার পরশ পেলাম। কার্পেটে পা রাখাই দায়। আমি, গৌরী ও ঋষভ মন্দির সংলগ্ন সবকিছু দর্শণ করে মন্দিরের বাইরে বেরিয়ে এলাম। তবে মার্বেলের মেঝেতে খালি পায়ে আসতে আসতে আমার দফা রফা। একেই সারা রাত ধরে হাঁটা। তার ওপর এই হিম প্রবাহ মেঝের ঠান্ডা পরশ। একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে।
এরপর আমি ও বাপ্পা আমাদের সবার জুতো, জিনিসপত্র আর মোবাইলগুলো সেই লকাররুম থেকে সংগ্রহ করে নিলাম। দেখলাম হাতঘড়িতে সকাল ন’টা বাজে। সূর্য উঠেছে পাহাড়ে ঘেরা মন্দিরের চূড়া বরাবর। সূর্যের বিকিরণে সাদা রঙের মন্দিরের অপরূপ শোভা বিরাজ করছে। এমন একটি দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করতে ভুল করলাম না। সকলকে নিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম। বাপ্পা, গৌরী ও ঋষভকে নিয়ে বেশ কয়েকটা সেলফি তুলে নিলাম। রাতে আসার সময় অন্ধকারে যা দেখতে পাইনি, সকালের সূর্যের উজ্জ্বল আলোতে বৈষ্ণোদেবীর মন্দির ও সাথে ঘিরে থাকা পাহাড়ের প্রাকৃতিক শোভা যেন সবকিছু ভুলিয়ে দিল আমাদের। আমি গৌরী, বাপ্পাকে বললাম,
“এবার ফিরতে হবে তো নাকি। অনেকখানি রাস্তা হাঁটতে হবে। আমাদের পা’য়ের অবস্থা কাহিল। অভিজিৎ ও পাছালবাবুরা পরে আসুক। আমরা আস্তে আস্তে এগিয়ে চলি"।
ঠিক সাড়ে ন’টার সময় আমরা মাতাজীর মন্দির থেকে ফেরার পথ ধরলাম।
গৌরীকে সাথে নিয়ে মাতাজীর মন্দির থেকে কাটরার দিকে ফেরার পথে ভাবছি এখানে আবার কবে আসব বা আদৌ আসতে পারব কিনা জানা নেই। পেছন ফিরে ভালো করে দেখে নিলাম মাতাজীর মন্দিরকে। আশেপাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশকে প্রাণভরে দেখে নিলাম শেষবারের মত। আসার পথে গৌরীর চোখে জল দেখে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম,
“কি হলো, কাঁদছ কেন? কষ্ট হচ্ছে?”
“সে তো হচ্ছেই অস্বীকার করতে পারি না। তবে আর আসতে পারবো না এখানে। কাল রাতে হাঁটা শুরুর পর বেশ কষ্ট নিয়ে আমরা এখানে এসেছি মাতাজীর দর্শন পাবো বলে। এখন দর্শন পাওয়ার পর ফিরে যেতে ইচ্ছা করছে না। মাতাজী’র জন্য মন বড্ড ব্যকুল হয়ে যাচ্ছে গো"।
“বুঝতে পারছি। কিন্তু এত ভেবে কি হবে বলো? এখন দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে কাটরার গেস্ট হাউসে ফিরতে হবে। তোমার আবার কষ্ট হচ্ছে। একটা কাজ করো, তুমি এখানে থেকে যাও, আমি ঋষভকে নিয়ে চলে যাই”
“ইয়ার্কি হচ্ছে? তুমি আর কি বুঝবে মায়ের মন?”
“ঠিক আছে গিন্নী। আমি বুঝতে পেরেছি। চলো আস্তে আস্তে এগোই আমরা। আর কাঁদতে হবে না। মা’কে স্মরণ করো। যেন হেঁটে ঠিক ভাবে পৌঁছে যেতে পারি"।
পাহাড়ের ধার ঘেঁসে থাকা সুন্দর সাজানো গোছানো রাস্তা ধরে আমরা এগোতে লাগলাম। ফেরার পথেও দেখলাম সকালের দিকে অনেক দর্শনার্থীরা মাতাজীর কাছে আসছে। বেশ কিছু দর্শনার্থীরা একজোট হয়ে উচ্চস্বরে বলছে, “জয় মাতাদি, জয় মাতাদি... জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি...” সেই শুনে ঋষভও জোর কন্ঠে বলে উঠল। আমি আর গৌরী শুনে খুব খুশি হলাম, যাক ছেলেটার মধ্যে ভক্তি শ্রদ্ধা আসছে। আসার পথে রাস্তার ধারে এক কফির স্টলে সবাই কফি পান করে নিলাম। সাথে কিছু বিস্কুটও মুখে পুরে নিলাম। গৌরী ও আমার ভাইয়ের স্ত্রী ওদের ব্যাগে রাখা কিছু চানাচুড় মুড়ি বের করল। সকলের মধ্যে খাবার গুলো ভাগ করে দিল। সকালের পেট একটু ভর্তি করে আবার ফেরার পথ ধরলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক হাঁটার পর গৌরীর পায়ে এবার একটু টান ধরলো, আমি ওকে ধরে আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম। দূর থেকে বৈষ্ণোদেবীর মন্দিরকে ভারী সুন্দর দেখতে লাগছে। সকালে সূর্যের আলোতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মাতাজীর মন্দির যেন আরও অপরূপ লাগছে। আমি গৌরীকে সাথে নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটার মধ্যেই নিজের মোবাইল বের করে আবার বেশ কিছু নয়নাভিরাম দৃশ্য লেন্সবন্দী করে নিলাম। ঋষভ ওর বাপ্পা মামার সাথে দ্রুত গতিতে কাটরার দিকে এগোতে লাগল।
আমি ও গৌরী নিজের মত করে পথ ধরে এগোতে লাগলাম। আসার পথে চারিদিকের দৃশ্য দেখছি আর ছবি তুলছি। এই পথে কত মানুষের আসা-যাওয়া, সবাইকে শুধু দেখছি। রাতে আসার সময় খেয়াল করিনি, তবে এখন দেখছি কেউ যদি কাটরা থেকে মন্দিরে আরও তাড়াতাড়ি আসতে চায়। বেশ কিছু দূরত্বের ফারাকে ধাপে ধাপে সিঁড়ি আছে। সেই সিঁড়ি দিয়ে কেউ যদি আসে, একসাথে পাহাড়ের দুটো ধাপ অতিক্রম করতে পারবে। সিঁড়িগুলোর স্টেপিং খুব ছোট। যাতে কেউ হোঁচট খেয়ে পড়ে না যায়। অনেককেই দেখলাম, বিশেষ করে কম বয়সীরা সেই সিঁড়ি দিয়ে আসা যাওয়া করছে। এছাড়াও খেয়াল করলাম রাস্তা দিয়ে অনেক ঘোড়া যাত্রীদের নিয়ে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। যেটা রাতের দিকে দেখতে পাওয়া যায় না। হয়তো রাতের অন্ধকারে অসুবিধা হতে পারে সেই কারণে। সবকিছু দেখে আমার ভীষণ ভালো লাগছে। সমগ্র ব্যবস্থাপনার ওপরে একরাশ মুগ্ধতা বিরাজ করছে। এছাড়াও লক্ষ্য করেছি প্রায় নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে এখানে অনেক মেডিক্যাল ক্যাম্প আছে। কোনো যাত্রী অসুবিধায় পড়লে সেই ক্যাম্পে গিয়ে তার শুশ্রুষা করা হয়। গতকাল রাত বা আজ সকালে ফেরার সময় দেখেছি বেশ কিছু দর্শনার্থীদের ভীড় এই ক্যাম্পগুলিতে। গৌরীকে একবার এই মেডিকেল ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে শ্রুশুষা করালে কেমন হয়! আমি গৌরীকে জিজ্ঞাসা করলাম,
“কিগো! একবার মেডিকেল ক্যাম্পে যাবে?”
“গেলে হয়। পায়ে বেশ টান লাগছে"
গৌরীকে নিয়ে একটা মেডিকেল ক্যাম্পে ঢুকতেই সেখানে উপস্থিত বেশ কিছু মহিলা স্বাস্থ্যকর্মী গৌরীকে অন্য একটি রুমে নিয়ে গেল। প্রায় আধঘন্টা পর গৌরী একটু ধাতস্থ হয়ে আমার সাথে ফেরার পথ ধরল। দুপুর নাগাদ আমরা গেস্ট হাউসে পৌঁছে যেতেই তমালদা বলল,
“তোমার পুত্র ওর মামার সাথে অনেকক্ষণ আগেই পৌঁছে গেছে। তোমাদের কষ্ট হয়েছে নিশ্চই। এই কষ্ট আজ হলেও সুখের স্মৃতি হয়ে সারাজীবন মনের মধ্যে গেঁথে থাকবে। সবই মাতাজীর মহিমা বৌদি। যাক, এবার ঘরের মধ্যে একটু বিশ্রাম নিয়ে নিন। তারপর স্নান করে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। আজ একটু হালকা করে রান্না করেছি। রাতে ডিনারটা ভালো করে হবে। কাল সকালে আমরা কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে রওনা দেব কেমন"।
“একদম তমালদা... পুরো বিন্দাস ব্যবস্থাপনা। তবে পাছালদার পাছা কেমন থাকবে বলতে পারবো না"
আমার কথা শুনে তমালদা উচ্চস্বরে হাসতে লাগল। বলল,
“পাছালদা ভাগ্যিস নেই। এই যাত্রায় বেঁচে গেলে"
“আমি ওনার সামনেই বলার ক্ষমতা রাখি তমালদা। কিচ্ছু বলবে না আমায়। চ্যালেঞ্জ নেবে কি! বলো"
“না থাক ভাই। তোমার অনেক ক্ষমতা আছে জানি। আমার স্ত্রী-ছেলে তোমার খুব প্রশংসা করেছে। অমৃতসরে যে ভাবে পাশে ছিলে তুমি। ভালোয় ভালোয় তোমাদের ঘুরিয়ে দিই। তবেই আমার শান্তি। যাও এবার রেস্ট নাও। খাওয়ার সময় ডেকে নেব"...
বেশ কিছুক্ষণ পরে অভিজিৎ ও পাছালবাবুর পরিবার এবং ট্যুরের বাকি সদস্যরাও ফিরে গেল। আমি রুমের বিছানায় শুয়ে ভাবছি, কিভাবে মাতাজীর দর্শন সম্ভব হলো। বিশেষ করে অমৃতসরে এমন একটি দুর্ঘটনা হওয়ার পর ভাবতে পারেনি মাতাজীর দর্শন আদৌ সম্ভব হবে কিনা। তবে বুঝতে পেরেছি, যেদিন থেকেই তমালদার সাথে কাশ্মীর ট্যুর নিয়ে চূড়ান্ত কথাবার্তা হয়েছে। সেদিন থেকেই কাটরার বৈষ্ণোদেবী মাতাজীর মন্দির ও অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির দর্শনের জন্য প্রতিনিয়ত আমাদের মন ছটপট করেছে। এমনকি ছোট্ট ঋষভের মধ্যেও এই ভক্তি সঞ্চার ঘটেছে। কথায় আছে ভক্তিতেই শক্তি। মনের এই প্রবল শক্তি ও ভক্তিতে সবকিছু অসাধ্য সাধন হলো। আমি মাতা বৈষ্ণোদেবীর উদ্দেশ্যে জানালাম,
“মাগো সবই তোমার মহিমা। ভক্তের মনোবাঞ্ছা তুমিই একমাত্র পূর্ণ করতে পারো। জয় মাতাদি, জয় মাতাদি... জোর সে বোলো... জয় মাতাদি... প্যার সে বোলো... জয় মাতাদি।’’