ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
জন্ম থেকেই অন্ধ আমি
দু চোখ দেখতে নারি
লাঠির উপর ভর দিয়ে
হাঁটতে শুধু পারি।
পাঁশকুড়াতে ট্রেনের ভিড়ে
প্যান্ট পকেটে পড়লো হাত
কর্কশ স্বরে চেঁচিয়ে ওঠে
‘‘অন্ধ চোর তো ভারি বজ্জাত।’’
অন্ধ সেজে ভিক্ষে করি
সুযোগ বুঝে চুরি চামারি।
আমিই নাকি খুব শয়তান
ভিক্ষে দেওয়া অপাত্রে দান।
অপরাধীরা খোলা রাস্তায়
মহানন্দে ঘোরে
নির্দোষ পিষ্ট প্রায়
সকাল সন্ধ্যা ভোরে।
দুর্নীতি লাগাম ছাড়া
ধরতে পার না রেশ
দুর্বলে কেন পদতলে রাখো
কেন এই বিদ্বেষ?
চক্ষু থেকেও হও অন্ধ
কণ্ঠ যুক্ত বোবা
কর্ণ জোড়াও বন্ধকে বাঁধা
গৃহের উঠোনে ডোবা।
মানুষ হয়ে পশু সেজে আছো
ধিক্কার তব পাওনা
মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলেছো
সেটা কি খুঁজে পাওনা।
বলিষ্ঠ রূপ কিসের তরে
নিরীহের নাই নিস্তার
দমন শোষণ উৎপীড়নে
সাম্রাজ্যের করো বিস্তার।
নির্যাতিত নারী ক্রন্দন
শোনার চেষ্টা করেছো
শেষ সম্ভ্রম লুণ্ঠিত হয়
রক্ষার কথা ভেবেছো?
সভ্য সমাজে নগ্ন খেলা
ঘটে চলে দিবারাত্র
আপন স্বার্থে মজেছো হায়
পুরু চর্মের গাত্র।
খাদ্য ভেজাল শিক্ষা ভেজাল
মানুষই নেই খাঁটি
বিষাক্ত আজ এই পৃথিবী
আলো বায়ু আর মাটি।
তোমরা আমায় চোর বলছো
শোনাও ন্যায়ের বাণী
ক্ষমতাবান শাসক হয়ে
তোমরা চোরের রাণী।
আজ থেকে আমি অন্ধ নই
তোমরা আসল অন্ধ
মুখোশটুকু খুলে দেব
রাজনীতি তব বন্ধ।
অঙ্ক কষে বুঝিয়ে দেবো
সমাজের ভালো মন্দ
বিষে বিষের বিষক্ষয়
বাধবে সাধের দ্বন্দ্ব।
ধান মেপেছ চাল মাপ নি
ধরবে এবার দন্ড
অত্যাচারীর অস্ত্র ভেঙে
হবেই খন্ড খন্ড।
‘‘ওই যে দেখো হাই কোর্ট’’
অন্ধকে দাও নির্দেশ
অন্ধ দেশে অন্ধ প্রজা
দেশান্তরে দরবেশ।
চক্ষু মেলে চশমখোর
অন্তঃসার শূন্য
জড়ত্বের বদ্ধ প্রাচীর
পঙ্কিলে আজ জীর্ণ।
হে জনগন অন্ধ সকল
গভীর নিশিতে জাগো
প্রভাতের আলো ফোঁটার আগে
মশাল জ্বালায় কে গো?
দেশের এই অন্ধকারে
তোমরাই মনোবল
দেশমাতৃকা রুদ্ধ দ্বারে
শিকল ভাঙবো চল।
চক্ষুদ্বয় নিয়েছ কেড়ে
অসহায়ত্ব করেছে গ্রাস
হায় বিধাতা হায় মানবতা
অন্ধত্বের শেষ নিশ্বাস।