ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
শীতের সকালে রোদের ঝলক এসে পড়েছে শ্রেয়ার ঘরে। সেখানে সে আয়নার সামনে নিজেকে খুঁটিয়ে, খুঁটিয়ে পরখ করে দেখছে কোথাও কোনো খুঁত রয়ে যায় নি তো!
সুন্দরী, স্মার্ট, তন্বী, অত্যাধুনিক ঝাঁ চকচকে মেয়েটিকে দেখলে এক নজরেই হাজার হাজার ছেলের প্রাণ সংশয় হয়ে পড়বে।
আজই কলেজের বিউটি কনটেস্টের শেষ দিন। ফাইনালে ওঠার পর শ্রেয়ার কনফিডেন্স দ্বিগুণ বেড়ে যায়। মনে নানা স্বপ্ন জাগে তার সাথে নতুন আসা ওই ছেলেটা। যে ওর ফটো শুট করছে তার ওপর ওর একটু দুর্বলতা দানা বাঁধে মনের কোনে।
খুবই কেয়ারিং ও সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেয় ছেলেটি। ওর কাছে অনেক কিছু শিখেছে শ্রেয়া। আজ তিনমাস ধরে নানা ভাবে নানা জায়গায় ফটো শুট হচ্ছে। শীতের আবহাওয়ায় ঠান্ডা পরশে দু তরফেই আগুন লাগে মনে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে এই সব উল্টোপাল্টা চিন্তায় মগ্ন থাকা শ্রেয়ার টনক নড়ল মায়ের চিৎকারে।
‘‘আয়রে কখন থেকে খাবার নিয়ে বসে আছি। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করে যাও। এখন তোমার কলেজের দেরি হচ্ছে না!”
শ্রেয়া তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে মায়ের চিৎকারে।
আজ শেষদিন বলে শ্রেয়া যেমন এক্সসাইটেড তেমনি কষ্টও।
আজ সেই ছেলেটিও কাজ শেষ করে ফিরে যাবে নিজের জায়গায়।
কলেজে যখন বিউটি কনটেস্ট হয়, সেই সময় মুম্বাই থেকে ফটোগ্রাফি করার জন্য রাজীব বলে একটি ছেলে আসে। একদম স্মার্ট ও ঝাঁ চকচকে। শ্রেয়া খুবই নাক উঁচু, কেউ ওর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সহজেই ডাল গলে না। কিন্তু দু একবার স্যুট করার পর পরই রাজীবের সাথে বেশ আলাপ জমে ওঠে শ্রেয়ার। মনে বসন্তের রঙ লাগে তার। শীতের আমেজ নিতে নিতে আউটডোর সুটগুলো খুব এনজয় করতো ওরা দুজনেই।
একটু কাছে আসা, কফি খাওয়া ও অনেক সময়ই গঙ্গার ধারে বসে দুজনে কোথাও হারিয়ে যাওয়া।
আস্তে আস্তে বন্ধুত্বও প্রেমে পরিণত হয় ওদের মধ্যে।
আজ তার শেষ দিন। কলেজের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর রাজীব শ্রেয়া’কে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলে—‘‘ম্যাডাম এই কনটেস্ট’টা জিতলেই তো বাজিমাত। তারপরে আসুন মুম্বাই। ওখানেও তো আপনার শেষ প্রোমোটা করতে হবে।”
শ্রেয়া বলে—‘‘যদি চান্স পাই তো আপনাদের মুম্বাইতে আমি আসছি। আবার দেখা হবে।”
রাজীব ফিরে যায় মুম্বাই। কিন্তু প্রতিদিনই ফোনে যোগাযোগ বজায় থাকে। শীতের রাতে ফোনের মাঝে ওরা হারিয়ে যায়, মিশে যেতে চায় দুজন দুজনের মাঝে।
শ্রেয়ার সিলেকশন হয়ে গেলে শ্রেয়াও প্রস্তুত হয় মুম্বাই যাওয়ার জন্য। ওদিকে অধীর আগ্রহে রাজীবও অপেক্ষা করে শ্রেয়ার জন্য। দিন ঠিক হলে মুম্বাই থেকেই ওরা টিকিট কেটে পাঠিয়ে দেয় শ্রেয়াকে।
শ্রেয়ার মায়ের খুব মন খারাপ। একটিমাত্র আদরের মেয়ে। কোনো দিনও মেয়েকে একটা রাতের জন্য ছেড়ে থাকেনি। তাই অনিমাদেবী শ্রেয়ার ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলে—‘‘ঠান্ডা লাগাবি না মা। গরম জামা কাপড় সব দিয়েছি। মেডিসিনও দিয়েছি। তোর তো আবার ঠান্ডা লাগার ধাত। ইনহেলারটা ভ্যানিটি ব্যাগে ক্যারি করবি। কোনো অসুবিধা হলে জানাবি। একা একা কি যে করবি কে জানে! আর কেটেলে গরম জল করে রাখবি। গরম জল খাবি। ঠান্ডা জল খাবি না।”
শ্রেয়া মাকে জড়িয়ে ধরে বলে—‘‘মা তুমি কিছু চিন্তা করো না। আমি আর তোমার সেই ছোট্ট মেয়েটি নই। তাছাড়া ওখানে যে ফটোশুট করবেন রাজীব উনি সব ব্যবস্থা করে রাখবেন। তোমার কোনো চিন্তা নেই।”
‘‘ঠিক আছে ওখানে পৌঁছেই আমাকে আর বাপিকে ফোন করে দিও। আর সবসময় ফোন কাছে রাখবে। যখনই কোনো অসুবিধায় পড়বে বাপিকে ফোন করবে তোমায় ওখান থেকে নিয়ে আসবেন।”
শ্রেয়া মাকে গালে একটা চুমু দিয়ে আদর করে বলে, ডোন্ট ওয়ারি মা, আমি আসছি।”
বলে, বেরিয়ে পড়ে।
বাইরে ক্যাব অপেক্ষা করছিলো তার নতুন গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
মুম্বাইতে সাদর আগ্রহে অভ্যর্থনার জন্য রাজীব এয়ারপোর্টে অপেক্ষা করছিল। শ্রেয়া বাইরে আসতেই দুজন দুজনের চোখের মিলন ঘটে। রাজীব শ্রেয়াকে একটা ফুলের তোড়া দিয়ে বলে—‘“ওয়েলকাম টু মুম্বাই।”
শ্রেয়ার চোখের কোনে ঠোঁটের ফাঁকে হাল্কা হাসির ঝিলিক খেলে যায়।‘‘থ্যাঙ্কস” বলে দুজনেই হেসে ওঠে। ওদের ঠিক করা রিসর্টে গিয়ে ওঠে। ওখানে সব রকম ব্যবস্থা আগে থেকেই করা ছিলো।
দুজনে পৌঁছানোর পর রাজীব শ্রেয়াকে ফ্রেস হতে বলে ও ডিনারের অর্ডার দেয়। শ্রেয়া ফ্রেস হয়ে এলে ওরা এক সাথে ডিনার করে ও শ্রেয়াকে সব বুঝিয়ে বলে যায় রাজীব।
‘‘কাল ঠিক সকাল নটায় নিতে আসবো। রেডি থেকো। আর কোনো অসুবিধা হলে ফোর জিরো জিরোতে ডায়াল করো। ওরা সব সময় হাজির থাকবে।’’
রাজীব চলে গেলে শ্রেয়া ফ্রেস হয়ে মাকে ফোন করে।
‘‘মা আমার কোনো অসুবিধা হয় নি। ভালোভাবে এসে পৌঁছেছি। চিন্তার কোনো কারন নেই। সকালে উঠতে হবে। আজ প্রচুর ধকল গেছে। পরে তোমায় আবার ফোন করবো।”
অনিমাদেবী মেয়ের গলা শুনে আশ্বস্ত হন।
মাকে জানিয়ে ফোন রেখে নিজের শরীর এলিয়ে দেয় বিছানায়। রঙিন স্বপ্নের দুনিয়ায়।
পরের দিন সকালে শ্রেয়া জলখাবার খেয়ে রেডি হয়ে বসে থাকে রাজীবের জন্য নটার আগেই। ঠিক নটায় বাইরে হর্নের আওয়াজ শুনে বেরিয়ে আসে শ্রেয়া। রাজীব গাড়ির দরজা খুলে কুর্নিশ জানিয়ে ইয়ার্কির ছলে বলে—‘‘আসুন মেডাম, আপনার স্বপ্নের দুনিয়ায় উড়ান নিতে।’’
দুজনেই হেসে উঠে। রাজীবের হাত ধরে তার স্বপ্নের দুনিয়ায় পা রাখে শ্রেয়া। প্রতিদিন নতুন কিছু শেখার সাথে সাথে দুজনে আরো কাছাকাছি চলে আসে। তিন মাসের এগ্রিমেন্ট এ সাইন করেছে শ্রেয়া।
এই করে তিন মাস কেটে যায়। শ্রেয়ারও ঘরে ফেরার সময় হয়।
আজ সেই শেষ রজনী।
শ্রেয়াকে ছাড়তে আসে রাজীব। দুজনে ঘরে ঢোকে। শ্রেয়া দুটো কাঁচের গ্লাস নিয়ে আসে। রাজীব ওয়াইনের বোতল নিয়ে এসেছে ওদের জার্নিটা সেলিব্রেট করবে বলে। দুজনে সামনাসামনি বসে। সেন্টার টেবিলে খাওয়ায় সরঞ্জাম। দুজনে দুটো গ্লাস হাতে নিয়ে গল্প করতে করতে রাজীব বলে—‘‘কাল রেডি থাকবে সকাল নটায় আসবো। দেরি করলে ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে।’’
দুজনেই বসে আছে সামনে ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বলছে। ওদের মনের আগুনও ধিকি ধিকি জ্বলছে। দুজনের মনে আগুন লেগেছে, মনটাও খারাপ। ছেড়ে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে আর আটকে রাখতে পারলো না নিজেদের। দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে চুম্বনে আবদ্ধ হলো। ওদের ভেতরের আগুনটা জ্বলছে সামনে ফায়ার প্লেসের আগুনের মতোই দাউদাউ করেই।
দুজনেই দুজনের অনেক কাছাকাছি চলে আসে তন ও মন থেকে। শীতের রাতেও তপ্ত হৃদয় ও তপ্ত শরীর শীতল করতে একে অপরের কাছে বিলিয়ে দেয়। ভালোবাসার হৃদয় দুটো মিলিত হয় একে অপরের জন্য।
শ্রেয়া রাজীবকে ছেড়ে থাকার কথা ভাবতেও পারে না। এবার শ্রেয়ার ঘরে ফেরার পালা। এখানে তিন মাসের এগ্রিমেন্ট শেষ। এখান থেকে সিলেকশন হয়ে গেলে শ্রেয়া বিদেশ পাড়ি দেবে সামনে উজ্বল ভবিষ্যত। বড় সেলিব্রিটি হয়ে যাবে সে। নিজের স্বপ্নপূরণ হবে। কিন্তু আজ তাঁর কাছে আর একটা জিনিস বড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হলো রাজীব। এতোদিন শয়নে স্বপনে একটাই স্বপ্ন ছিলো বড় সেলিব্রিটি হবো। মডেলিং করবো। এখন রাজীব রাজীব আর রাজীব।
দুজনেই দুজনকে চুক্তি করে এক হওয়ার। কথা দিয়ে ঘরে আসে শ্রেয়া। এসে মা বাবাকে সব কথা খুলে বলে। কিন্তু কিছুতেই বাবা এই সম্পর্ক মেনে নিতে নারাজ।
শ্রেয়াকে বলেন—‘‘অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি। তোমার স্বপ্ন পূরণের জন্য এতদিন মুখ বুজে ছিলাম। তোমার সব আব্দার মুখ বুজে মেনে নিয়েছি, কিন্তু আর নয়, এবার সব বন্ধ। আমি ভালো পাত্র দেখে তোমার বিয়ে দেবো। তোমার একটা কথাও শুনবো না।’’
আজ পর্যন্ত শ্রেয়ার বাবা অমরেন্দ্রবাবু মেয়ের কথাতে কোনো বাঁধা দেন নি। খুব আদরে মানুষ করেছেন শ্রেয়াকে। কিন্ত আজ তিনি কারোর কোনো কথাই শুনলেন না। শ্রেয়ার জন্য ভালো পাত্র দেখে বিয়ের দিন ঠিক করে ফেললেন।
রাতের অন্ধকারে বাবা, মার অমতে গিয়ে এক কাপড়ে ঘর ছাড়ে শ্রেয়া।
মা, বাবা মেয়ের এই অধঃপতন মেনে নিতে পারেনি। মা,বাবা আর কোনো সম্পর্ক রাখেনি শ্রেয়ার সাথে। কিন্তু শ্রেয়াও খুব জেদি। রাজীবের ঝাঁ চকচকে স্মার্ট কথা বার্তা দেখে ওর জন্য সব করতে রাজি। নিজের স্বপ্নের জগৎ ছেড়ে রাজীবের হাত ধরে পাড়ি দিলো অন্য জগতে।
সেখানে শুধুই রাজীবের আধিপত্য। রাজীবের সংসারে নিজেকে বিলিয়ে দিলো শ্রেয়া। নতুন সংসারে শ্রেয়া সব ভুলে মন দিয়ে ঘর করতে থাকে নিজের কেরিয়ারকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে। প্রথম প্রথম বুঁদ ছিলো ভালোবাসার যাদুতে শ্রেয়া। রাজীবের মিষ্টি কথা আর কেয়ারিংয়ের জন্য ও সব করতে রাজি। নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিল শ্রেয়া রাজীবের ভালোবাসার ছত্রছায়ায়।
এইভাবে ভালোই কাটছিল তাদের ভালোবাসার নীড়ে। দুবছর খুব ভালোভাবে অতিক্রান্ত হলো।
কিন্তু সংসারে মশগুল শ্রেয়া বুঝতেও পারেনি যে তাদের সংসারে কোথা থেকে নোনা জল ঢুকতে লেগেছে। একটু একটু করে ঘুণ ধরতে শুরু করেছে। সব সময় রাজীবের কথা ভাবতে ভাবতে নিজের অস্তিত্ব, আত্মসম্মানকে বিসর্জন দিয়ে দিয়েছিলো। রাজীব কি ভালোবাসে, কি খেতে পছন্দ করে, অফিস যাওয়ার সময় হাতে হাতে জল, রুমাল, সব দেওয়া। এমনকি, পায়ে জুতোটাও পরিয়ে দেয় শ্রেয়া।
একদম ঘোর সংসারী। ভাবলে অবাক লাগে, যে মেয়ে কেরিয়ার সম্পর্কে এতো সচেতন ছিলো। দেমাকি, অহংকারী ও ঝা চকচকে বিউটি কুইন, এখন টিপিক্যাল বাঙালি বধু সেজে সংসারের যাবতীয় কাজ সেরে রাজীব আসার আগে সব কিছু রেডি করে তটস্থ থাকে।
হাসিও পায়!
কি করে সম্ভব? দুজনের ভালোবাসার গাঢ় রঙ কি করে কখন আস্তে আস্তে ধূসর রঙে পরিনত হয়েছিলো কেউ টের পায়নি।
এমনি করে আরো দুবছর কাটে। রাজীব কাজে নিজেকে এতো ব্যস্ত করে নেয়, যে শ্রেয়ার দিকে তাকানোর সময় নেই। ওর থেকে উদাসীনতার জন্যই নিজেকে কাজে ডুবিয়ে রাখে। মাসের মধ্যে পনেরো দিন অফিস ট্যুরে কাটায়। শ্রেয়া অন্ধর মতো তার জন্য অপেক্ষায় থাকে। এই ভাবে সময় দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে।
এই ভাবে আরো এক বছর কাটে। বসন্ত কোথায় হারিয়ে গেছে ওদের জীবন থেকে। আবার বসন্ত পেরিয়ে শীত আসে।
অফিস ট্যুরে যাবে রাজীব। ফটোসুটের জন্য ওকে বাইরে বাইরে বেশী ঘুরতে হয়। বিদেশেও যায়। বিয়ে’র প্রথম প্রথম শ্রেয়াকে সাথে করে নিয়ে যেতো। তখন তো শ্রেয়াকে চোখে হারাতো। কখন আস্তে আস্তে দুজনের মধ্যে এতটা দুরত্ব তৈরী হলো ওরা কেউ বুঝতেই পারেনি।
রাজীব বাইরে যাবে। অফিস ট্যুরে। সেই জন্য রাজীবের ব্রিফকেসে তার যাবতীয় দরকারি জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখছিল শ্রেয়া। রাজীব স্নানে গেছে। শ্রেয়া নিজে হাতে সব কিছু গুছিয়ে দেয়। রাজীব তো নাহলে কিছুই খুঁজে পাবে না। শীতের জন্য গরমজামা কাপড় গোছাতে গোছাতে পুরোনো স্মৃতিতে ফিরে যায়।
পাঁচ বছর আগে এই রকম এক শীতের রাতে ওদের ভালোবাসা একটা রূপ পেয়েছিল। তাদের দেখা, মিলিত হওয়া ও ভালোবাসার পরিণতি এক মেরুতে এনে ফেলেছিল দুজনকে। এই শীতের রাতে।
ওর চিন্তার ছেদ পড়ে, টেবিলে রাখা রাজীবের মোবাইল থেকে ম্যাসেজের টুং টাং আওয়াজে।
রাজীবের ফোন খুব একটা ধরে না শ্রেয়া।
রাজীব পছন্দ করে না ওর জিনিসপত্রে হাত দেওয়া। কিন্তু, হাতের সামনে কোনো জিনিস না পেলে ও ঘর একদম মাথায় করে নেয়। শ্রেয়া সব গুছিয়ে রেখে, একমনে কতোগুলো সার্ট ইস্ত্রি করছিলো।
পনেরো দিনের জন্য যাচ্ছে এবারে ব্যাঙ্কক। তাই বেশি করে সার্ট, প্যান্ট দিয়ে দিচ্ছে। ওখানে তো কিছু কাচাকুচি করবে না। প্রতিদিনই একটা করে জামা চেঞ্জ করতে হবে। মিটিং এ তো নোংরা জামা পড়া যাবে না। প্রজেক্টের ব্যাপার। তার পর এবারে ঠান্ডাও জাকিয়ে পড়েছে। তাই গরম জামাকাপড় না দিলে যা আত্মভোলা মানুষ ঠান্ডায় ওই রকমই ঘুরে বেড়াবে নিয়ে শরীর খারাপ করবে। কাল ওদের বিবাহবার্ষিকী। শ্রেয়া জানায় নি রাজীবকে।
আগে রাজীবকে এই সব বলতে হতো না এখন ইদানিং সব ভুলে যাচ্ছে। শ্রেয়াও মনে করানোর পাত্রী নয়।
ওর যখন মনে নেই শ্রেয়াও কিছু বলেনি। অভিমান হয়েছে। বিবাহ বার্ষিকীতে ওর ট্যুরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেই শ্রেয়া এখন আর নেই। তাই এখন তো আর মনে করানোর কোনো প্রশ্নই নেই।
শ্রেয়া এখন যেন বেশি চুপচাপ হয়ে গেছে। এখন রাজীবকে কোনো প্রশ্ন উত্তরও করে না। কেউ বুঝতে পারে না এটা কিসের জন্য?
নিজের মতো থাকা? না, মান, অভিমান, রাগ, না, সব কিছুকে মানিয়ে নেওয়া? না, নিজের ভুল বুঝতে পারা। কিন্তু সব সময় তাঁর মুখে হাসি বর্তমান। কোনো রাগ, ঝগড়া করে না সে। বিয়ের আগের ঠিক উল্টো মেরুতে হাঁটছে যেন সে। এই শ্রেয়াকে দেখলে তাঁর বন্ধু, মা, বাবা, কেউ চিনতেই পারবে না এতোটাই শান্ত। দেখলে মনে হবে জিন্দা লাস।
অনেকক্ষণ ধরে টুং টাং ম্যাসেজ ঢুকতে ঢুকতে হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো...।
শ্রেয়া ওয়াসরুমে র দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে—‘‘রাজীব তোমার ফোন অনেকক্ষণ ধরে বাজছে।”
রাজীব ভেতর থেকেই বলে—‘‘বাজুক, আমি আসছি।”
বিরক্ত হয়ে শ্রেয়া ফোনের সাউন্ড অফ করতে গিয়ে দেখে রাজীবের সেক্রেটারি ফোন করেছে।
‘‘যদি কোনো আর্জেন্ট কল থাকে?” এই ভেবে শ্রেয়া ধরবে কি ধরবে না ভাবতে থাকে। একসাথে একটা টিম যাবে অফিস থেকে। তাঁর মধ্যে সেক্রেটারি তো মাস্ট। সব ইনফরমেশন সব কিছুর দায়িত্ব তো তাঁর হাতেই। মডেলকে তৈরি করার থেকে ফটোশুটের সব দায়িত্ব সেক্রেটারীর। ভাবতে ভাবতে ফোনটা রিসিভ করেই ফেলে শ্রেয়া।
ওপাশ থেকে একটা রিনরিনে মিষ্টি সুরেলা সুর ভেসে এলো—‘‘হ্যালো, রু! তোমাকে কখন থেকে ম্যাসেজ করছি। তুমি উত্তর দিচ্ছ না কেন? আমি ভাবলাম তোমার স্ত্রী বোধ হয় পাশেই আছে। তাই তুমি ফোন তুলছিলে না ? হ্যালো, ডার্লিং, তোমার আমার ওই সুইফটটা বুক করেছি। অফিসের অন্যরা যেমন থাকে থাকবে। তুমি আর আমি একটা রুমে প্রতিবারের মতো...হা--হা--হা--হাসির ফোয়ারা ওই প্রান্ত থেকে ভেসে আসছে।”
শ্রেয়া কোনোরকমে খাটের হাতল ধরে বসে পড়ে। কোনো সার নেই শরীরে। ‘কি আবোল তাবোল বকছে মেয়েটা!’ কিছুই যেন তার মাথায় ঢুকছে না। চোখের কোন সিক্ত হয়। মনের ভেতর ঝড় ওঠে।
ওপাশ থেকে ভেসে আসে—‘‘হ্যালো...হ্যালো...ডার্লিং...!”
ফোনটা হাত থেকে বিছানায় পড়ে যায়।
রাজীব স্নান করে বেরিয়ে বিছানা থেকে শ্রেয়ার আয়রন করে রাখা সার্ট, প্যান্ট, টাই, কোট পরতে পরতে বলে ওঠে—‘‘কি গো, কি হলো? তাড়াতাড়ি আমার খাবারটা রেডি করো! ফ্লাইট মিস হয়ে যাবে তো! খেয়েই বেরবো। অফিস থেকে এক্ষুনি গাড়ি এসে যাবে। রিচাও আসবে নিতে। হ্যারি অ্যাপ!”
বিরক্তি সূচক ভাবে বলে ওঠে!
শ্রেয়া কোনো জবাবদিহির গন্ডিতে না গিয়ে একটু করুণ হাসির রেখা ফুটিয়ে বেরিয়ে আসে ঘর থেকে।
এতো আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে তাঁর মাথায়! তার তো ঘর ভেঙ্গেছে!
রাজীবকে কিছু বুঝতে না দিয়ে বুকে পাথর চাপা দিয়ে চুপচাপ সব মুখের সামনে রেডি করে দেয়।
রাজীবের গাড়ি এসে দাঁড়ায় দরজার সামনে। রাজীব তাড়াতাড়ি বাই করে বেড়িয়ে যায়। শ্রেয়া হাসে, রক্ত ক্ষরণের হাসি। কবে থেকে ভুলে গেছে রাজীব শ্রেয়াকে আদর করে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিয়ে বাইরে যেতে!
শ্রেয়াও ভুলে গেছে কবে থেকে এই নিয়মটা বদলে গেছে! তার চোখে তো ভালোবাসার অন্ধ পট্টি ছিলো।
রাজীব বলতো—‘‘তোমায় আদর করে না বেরলে আমার যাত্রা শুভ হয় না।” কখন থেকে শুভ, অশুভ সব বদলে গেলো!
রাজীব ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়াতে, এতক্ষণ চেপে রাখা বুকফাটা যন্ত্রণা বেরিয়ে এলো তার চোখ দিয়ে। মাটিতে বসে এলোপাথাড়ি ভাবে নিজেকে মারতে থাকে আর কাঁদতে থাকে। সেই সময় কেউ তাকে দেখলে বলতো নির্ঘাত সে পাগলিনী।
দু দিন ধরে একইভাবে স্থির হয়ে বসে থাকে পাথরের মূর্তির মতো নাওয়া খাওয়া ভুলে। তার কিছুই মাথায় আসছে না, সে কি করবে। যার জন্য সবকিছু ছেড়েছে, মা, বাপি, কেরিয়ার, তার স্বপ্ন সব কিছুকে জলাঞ্জলি দিয়ে আঁকড়ে ধরেছিল রাজীবকে। একটা বাচ্চা মেয়ের মতো।
কাজের লোক এক সপ্তাহ ছুটিতে গিয়েছিল।
কাজের লোক এসে দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো।
সে অবাক হয়ে ভাবে—‘বৌদি তো কোনোদিনও দরজা খুলে রাখে না!’
ঘরে ঢুকতেই দেখে মাটিতে পড়ে আছে বৌদি। সে ভয় পেয়ে পাড়ার লোককে ডাকে। সবাই এসে অজ্ঞান, অচৈতন্য শরীরটাকে সামনের সোফায় ধরাধরি করে শুয়ে দেয়। পাশের বাড়ির ভদ্রলোক ডাক্তারকে ও অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করেন।
ডাক্তার এসে দেখতেই বলে এক্ষুনি অ্যাডমিট করতে হবে। এতো সুইসাইড কেস!
পালস দেখতে গেলে হাত থেকে একটা ঘুমের ওষুধের শিশি গড়িয়ে যায়।
ডাক্তার বলেন—‘‘ঘুমের অনেকগুলো ওষুধ ওনার শরীরে মিশে গেছে। তাড়াতাড়ি পেট ওয়াশ করতে হবে। পরীক্ষা না করে কিছুই বলা যাবে না। তাই যতো শিগগিরি পারেন ভর্তি করে দিন।”
একজন বলে ওঠেন—‘‘অ্যাম্বুলেন্স বলে দিয়েছি। কিন্তু বৌদির ঘরে কেউ নেই?”
আর একজন কাজের মেয়েটাকে বলে—‘‘দাদাকে একবার অফিসে বৌদির ফোন থেকে ফোন করো। দেখো দাদাকে তো পুরো বিষয়টি জানাতে হবে। নাহলে ভর্তি করবো কি করে? তাছাড়া, দাদাকে না জানালে উনি রাগ করবেন। যতক্ষন না অ্যাম্বুলেন্স আসছে তুমি ফোন করো।’’
কাজের মেয়েটি, শ্রেয়ার ফোন এনে রাজীবের নাম্বারে ফোন করতে থাকে, কিন্তু রিং হতে থাকে কেউ ফোন তোলে না। রিং হতে হতে ফোন সুইচ অফ বলতে থাকে।
মেয়েটি পাড়ার ভদ্রলোকটিকে বলে—‘‘দাদা ফোন ওঠাচ্ছেন না। ফোন বাজতে বাজতে সুইচ অফ হয়ে গেলো।”
অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়ায়। শ্রেয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। আর কাজের মেয়েটিকে পাড়ার ভদ্রলোকটি বললেন—‘‘কোনো খবর থাকলে জানিও। আর দাদা যদি ফোন না তোলেন বৌদির বাপের বাড়িতে খবর দাও। ফোন থেকে নাম্বার খুঁজে বার করে।’’
বলে, অ্যাম্বুলেন্স করে শ্রেয়াকে নিয়ে চলে গেলেন।
মেয়েটি বৌদির ফোন ঘেঁটে ঘেঁটে শেষে দেখে ‘‘মা’’ করে একটা নাম্বার সেভ আছে। তাতে ফোন ট্রাই করতে করতে অনেকক্ষন পর একজন মহিলার কন্ঠ ভেসে এলো।
‘‘হ্যালো, কাকে চাই? আপনি কে বলছেন?
মেয়েটি বললো—‘‘আপনি কি শ্রেয়া বৌদির মা বলছেন?”
ওপাশ থেকে বিরক্তির কন্ঠে বলে ওঠেন—‘‘কেন? আপনি কে? ওই নামের কোনো মেয়েকে আমি চিনি না। যখন তখন ফোন করে বিরক্ত করবেন না তো!” আস্তে আস্তে বলে, ‘মরে গেছে, ও আমাদের কাছে মরে গেছে!’
ওপাশ থেকে মেয়েটি বলে ওঠে—‘‘রাখবেন না প্লিজ...শ্রেয়া বৌদি হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।’’
ওপাশ থেকে ফোনটা পড়ে যাওয়ার আওয়াজ পায়।
কিছুক্ষণ পর শ্রেয়ার ফোনটা বেজে ওঠে।
মেয়েটি ফোন রিসিভ করে বলে—‘‘হ্যালো, কাকে চাই? কে বলছেন?”
একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে ওপাশ থেকে—‘‘আমি শ্রেয়ার বাবা বলছি। কি হয়েছে শ্রেয়ার? কোন হাসপাতালে আছে? রাজীব কোথায়? ওর সাথেই আছে তো? তুমি কে বলছো?”
হাজার প্রশ্নে মেয়েটি ভয় পেয়ে যায়। তারপর বলে—‘‘আমি বৌদির বাড়িতে কাজ করি। এক সপ্তাহ কাজে আসিনি। কাজে এসে দেখি বৌদি ঘরের নিচে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। ডাক্তার বাবু বলছেন বৌদি নাকি আত্মহত্যা করতে গিয়ে ছিলো। পাড়ার ছেলেরাই ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্স ডেকে বৌদিকে হাসপাতালে ভর্তি করেছে। দাদাবাবুর ফোন সুইচ অফ বলছে। অফিসে ফোন করাতে অফিসের লোক বলেন, ‘অফিসের কাজে বাইরে গেছেন।’ কিন্তু দাদাবাবুকে অনেক বার ফোন করেছি। ফোন সুইচ অফ বলছে। ফোন তুলছেন না। তাই আপনাদের নম্বরে ফোন করলাম।”
একসাথে এতোগুলো কথা বলে মেয়েটা শ্বাস নিলো।
ওপাশ থেকে শ্রেয়ার বাবা হাসপাতালের নাম নিয়ে বললেন—‘‘আমরা আসছি’’ বলে, ফোন রেখে দিলেন।
শ্রেয়ার মা, বাবা হাসপাতালে মেয়ের কাছে এসে ডাক্তারের সাথে কথা বলে, বড়ো ডাক্তারের ব্যবস্থা করলেন। যতোই মেয়ের ওপরে রেগে থাকুন না কেন, কোনো মা বাবাই মেয়ের মৃত্যু কামনা করবেন না। যতোই কু সন্তান হোক কু মাতা নৈব চ।
যমে মানুষে লড়াই করে দশদিন পর শ্রেয়া চোখ খুললো।
ডাক্তার বললেন—‘‘কোনোরকম উত্তেজিত শ্রেয়ার জীবনে ক্ষতি করতে পারে। জোর করে কোনো প্রশ্নের উওর চাইবেন না। ওর মন ভালো রাখবেন। যা ওর ভালো লাগে তাই করবেন। জোর করে কিছু করাতে গেলে বিপদ বাড়বে। স্ট্রেস একটুও নিতে পারবে না। ডিপ্রেসনে চলে যাবে, বা পাগলও হয়ে যেতে পারে। মানসিক অবস্থা ভালো নয়। স্টমাক ওয়াস করে দিয়েছি। কিন্তু ওর বডিতে এতোটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে অনেক অর্গান কমজোর হয়ে পড়েছে। ঠিক মতো পথ্য ও সহযোগিতা ওনার সাথে করতে হবে। ওনাকে ওনার মতো করে ছেড়ে দিন। আরো বলেন—‘‘ আমি একটা অ্যাডভাইস দিচ্ছি, ওনাকে নিয়ে কোথাও একটু ঘুরিয়ে আনুন। পাহাড় হলে খুব ভালো হয়। তাহলে যদি এই ডিপ্রেসনটা কাটে।’’
রাজীব পনেরো দিন পর ঘরে এসে সব শুনে অবাক হয়। হাসপাতালে যায় শ্রেয়াকে দেখতে।
আজই শ্রেয়াকে ছাড়বে। একটা কথাও এখনো বলেনি শ্রেয়া। ওর মা, বাবাও ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি। জানে ডাক্তার পই পই করে মানা করে দিয়েছেন। আবার পুরোনো ঘায়ে আঘাত দিয়ে ঘা-টা বাড়াতে চাননি।
রাজীব এসে শ্রেয়ার সামনে দাঁড়ায়—‘‘শ্রেয়া কি হয়েছে তোমার?’’
হাতদুটো চেপে ধরে।
‘‘কি যে করো না তুমি! চলো আমি নিয়ে যেতে এসেছি তোমাকে।’’
শ্রেয়া মুখ ঘুরিয়ে নেয় চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।
শান্তভাবে মাকে বলে—‘‘মা আমি বাড়ি যাবো! আমায় বাড়ি নিয়ে চলো! আমি নিজের ঘরে যেতে চাই।’’
চোখের চাহনী ফ্যাকাসে। তাতে কোনো ভাষা নেই। রঙ নেই। তার মনের কথা কেউ পড়তে পারে না। রাজীব এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল।
শ্রেয়ার বাবা তার কাঁধে হাত দিয়ে তাকে সরিয়ে দেয়।
শুধু বলে, “না তো না।”
রাজীব সরে দাঁড়ায়।
মা, বাবা শ্রেয়ার সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়। শ্রেয়াকে অ্যাম্বুলেন্স করে ঘরে নিয়ে আসে। (বাপের বাড়ি ) নিজের বাড়িতে, স্বাধীনতার ছত্রছায়ায়।
শ্রেয়ার মা, বাবা শ্রেয়াকে কিছুদিন পাহাড়ে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে। সে এখন একটা বাচ্চা মেয়ে হয়ে গেছে। তাঁরা তাঁকে স্নান করিয়ে দেয়, খাইয়ে দেয়, চুল বেঁধে দেয়। সে শুধু নির্বিকার ভাবে বসে থাকে। কথাও বলে না। হাসেও না, কাঁদেও না। একটা পুতুল।
বেশ কিছুদিন এই ভাবে চলার পর রাজীবের কাছে ডিভোর্স পেপার চলে যায়। ওদের ডিভোর্স ও হয়ে যায়।
পাঁচ বছর ধরে শ্রেয়াকে মেন্টাল ট্রিটমেন্টে ও ইন ম্যাচিওর শিশুদের ক্লাসে নিয়ে গিয়ে পড়াশুনো করানো হয়। অনেক শিশুদের সাথে থেকে শ্রেয়াও শিশু হয়ে যায়। ওদের সাথে খেলে, হাসে।
দুর থেকে শ্রেয়ার মা, বাবা চোখ মোছেন।
একটু একটু করে শ্রেয়া নিজের মাটি খুঁজে পায়। সুন্দর জীবনে ফিরে আসে কিন্তু মেন্টাল ডিসব্যালেন্সের জন্য তার জীবন থেকে দশটা বসন্ত ছিঁড়ে পড়ে যায়। সে জানতেও পারে না। ওষুধের দ্বারা ভালো হতে থাকে। বসন্ত পেরিয়ে শীত আসে। শীত ও চলে যায় তার আপন গতিতে।
এই ভাবে দশ বছর পার হয়।
সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আসতে অতীতকে ভুলতে থাকে। এখন সে অন্য এক মানুষ।
তার নব জন্ম হয়। সেখানে বিকলাঙ্গ বাচ্চাদের সেবা যত্ন করা, নার্সিং, পড়ানো ও যত্ন সহকারে তাদের দেখাশোনা করে। এনজিও চালায় ও অনাথ শিশুদের বন্ধু হয়ে ওঠে। শ্রেয়া আজ অন্য রূপে, অন্যভাবে অনন্য।
সব কিছু ভুলে নিজেকে উৎসর্গ করেছে দেশের কাজে। বিকলাঙ্গ শিশুদের পাশে থেকে তাদের মুখে হাসি ফোটাতে ব্যস্ত এখন সে। নতুন দিগন্তে সোনালী আলোর কিরণে পূবের মেঘে আলো ঝলমল করে।
আজ সে ভুলে গেছে রাজীবকে। তার ফেলে আসা পুরোনো জীবনটাকে। সব কিছু উজার করে দিয়েছে সেই শিশুদের জন্য। আজ তার নতুন জন্ম হয়েছে। দ্বিতীয় জন্মে এই শিশুদের সে মা হয়ে উঠেছে। সব ভুলে তাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের সাথে বাঁচতে শিখেছে। আজ সে এই শিশুদের কাছে ভালোবাসার উষ্ণতার পরশ পেয়েছে দ্বিতীয় জন্মে ওদের মা হয়ে।