ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ব্যবসার কাজে প্রবাল নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছিল। এক সময় স্ত্রী ও তাদের একমাত্র মেয়েকে ভুলে যাচ্ছিল। কখনো দেখা যেত বাড়ির কেউ কিছু বললে প্রবাল কোন সাড়া দিত না। এক কথা কেউ দুবার বললে ও এতটাই রেগে যেত, নিজের স্ত্রী হলেও তাকে বলতো ঘর থেকে বেরিয়ে যাও। কোনো কথা এখন সহ্য হচ্ছে না। ব্যবসা করে একসময় প্রবাল উচ্চশিখরে উঠে পড়েছিল। এক বছরেই একটা দামি গাড়ি ও একটা বড়ো ফ্ল্যাট কিনে ফেলল। একটা কথা সত্য যে কেউ যদি খুব তাড়াতাড়ি উচ্চশিখরে ওঠে তবে খুব তাড়াতাড়ি মাটিতে মিশে যায়। প্রবালের জীবনে ঠিক তাই ঘটেছিল।
এক সময় বাজার মন্দা হল। ব্যবসা তলানিতে গিয়ে দাঁড়াল। প্রবাল রাতারাতি গাড়ি, ফ্ল্যাট বিক্রি করে দিল। এরপর বাজার থেকে সে অনেক টাকা ধার নিল। টাকা ধার নিয়েও কোন সুরাহা হল না। যাদের থেকে সে ধার নিয়েছিল তারা প্রায়ই এসে অসংগত কথা ও হুমকি দিয়ে যেত। তখন তার স্ত্রী ও তার ছয় বছরের ছেলে তার দিকে করুণভাবে চেয়ে থাকত।
প্রবালের একটা লাইসেন্স করা বন্দুক ছিল। হঠাৎ একদিন রাতে ডিনারের পর স্ত্রী ও ছেলেকে গুলি করে হত্যা করল। এরপর নিজেই নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করল। গুলির আওয়াজ শুনে এলাকার লোক ছুটে এল। এরপর তারা থানার ওসিকে ফোন করল। ওসি কয়েকজন পুলিশ নিয়ে এলেন। বডি পোস্ট মর্টেমের জন্য পাঠানো হলো। পোস্ট মর্টেমের রিপোর্টে কিছুই পাওয়া গেল না।
এলাকার লোকই তিনটে বডি দাহ করার ব্যবস্থা করল। এলাকার দাশুদা বললেন, প্রবাল বরাবর খুব চাপা ধরনের ছেলে ছিল। কখনো মনের কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করত না। একটা কথা ঠিক যে কেউ যদি কাপুরুষের মতো মরতে চায় তাকে কে বাঁচাবে?