ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
ইলশেগুঁড়ি ২৯তম সংখ্যা (শারদীয়া)
জমকালো অন্ধকার,
তারারা জোনাকির মত মিটমিট করছে,
দূরের আকাশে কৃষ্ণপক্ষের একফালি চাঁদ,
স্নিগ্ধতা আর কোমলতায় ভরা ধরিত্রীর এক নতুন বেশ।
আলগোছে চুল নিয়ে,
আনমনা হয়ে জানালার ধারে দাঁড়াবি,
আলতোভাবে রেলিংয়ের উপর হাত রেখে
উপভোগ করবি বাইরের পৃথিবীকে।
রাস্তার দিকে চাইলেই
মনে পড়বে কত স্মৃতি, কত মুহূর্ত,
আর আমায় কি মনে পড়বে?
নাকি আর পাঁচটা সাধারণ স্মৃতির মত আমিও থাকব বিস্মৃত?
ভোরের সূর্য যখন
নতুন রঙের ছটা নিয়ে রাঙিয়ে দেবে সবকিছু,
উজ্জ্বলতার স্পর্শে যখন ঝিকমিক করবে নদীর জল,
বিকেলে যখন মেঘেরা সাজবে নতুনরূপে,
ছুটে যাবে তারা যক্ষপ্রিয়ার কাছে
নির্বাসিত, বিরহী কোনো অজ্ঞাত যক্ষের কুশলবার্তা নিয়ে
উদ্বিগ্ন তুই সব দেখবি
আর আমায় কি একবারও মনে পড়বে না?
পুরীর সৈকতে দাঁড়িয়ে
মুগ্ধতা কুড়োবি গোধূলীলগ্নের সৌন্দর্যের,
আমার স্মৃতিরও কি হয়ে যাবে অন্ত
অস্তগামী বিদীর্ণহিয়া অরুণের সাথে?
নির্জন রাত্রে যখন হাঁটবি একা,
কিংবা যখন জৈষ্ঠ্যের মাথাঝিমানো দুপুরে
পাকা রাস্তাতেই ভ্রম হবে মরীচিকার
তখনও কি আমায় মনে পড়বে না?
কোমল কন্ঠে আবৃত্তি করবি রবীন্দ্রনাথের কবিতা,
গুনগুন করে গাইবি নজরুলের গান,
বর্ষামুখরিত দিনে বৃষ্টি পড়বে,
দু-হাত ছড়িয়ে তুই ভিজবি ঝিরঝির ধারায়,
ঠান্ডা বাতাসের মৃদু কাঁপুনি লাগবে গায়ে,
আমার কথা কি একদমই পড়বে না মনে?
রোজকার অভ্যাসের মতো
ডায়েরি নিয়ে লিখতে বসবি নিজের জীবনস্মৃতি,
শখ করে লিখবি দু-একটা কবিতাও,
মনের কথা ফুটে উঠবে লেখার রূপে,
আর আমি?
একবারের জন্য অন্তত একটা ছত্রে মাত্র
তোর জীবন অধ্যায়ের একটু মুহূর্তের ভাগীদার হিসেবে
আমার নামটা উল্লেখ করবি না কি?
সবশেষে পৃথিবী যখন হয়ে যাবে ধ্বংস,
তুইও থাকবি না, আমিও না,
স্বর্গলোকে ক্ষণিকের জন্য যদি
তোর সাথে আমার হয়ে যায় দেখা
(হয়ত তুই চিনতে পারবি না,
চোখ ফিরিয়ে সরে যাবি অন্যদিকে,
আমি থাকব একা পড়ে)
আমায় কি মনে পড়বে?